সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja)। কিন্তু এ তো শুধুই এক উৎসব নয়। একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা। আর সেটাই শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্যে দিয়ে। বাংলার বাইরে যেখানেই বাঙালি, সেখানেই শরৎ এলে বেজে ওঠে আগমনি গান। দুবাইও (Dubai)তার ব্যতিক্রম নয়। এবছর ‘উৎসব দুবাই’য়ের পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে পুজোকে আরও উন্নত করে তোলার লক্ষ্য নতুন বেশ কয়েকটি সংযোজন হয়েছে এই পুজোয়।
এবছরের দুবাইয়ের এই দুর্গাপূজার মূল আকর্ষণ ছিল মহালয়ার (Mahalaya) লাইভ চণ্ডীপাঠ। ভোরের আলো ফোটার আগেই, চণ্ডীপাঠের সুমধুর ধ্বনিতে জেগে ওঠে মণ্ডপ। উদ্যোক্তারা জানালেন, দুর্গাপূজাকে ইউনেস্কোর (UNESCO) স্বীকৃতি দেওয়ার পর বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে, যা আপামর বাঙালির জন্য একটি গর্বের বিষয়। বাঙালির আবেগ ও ভক্তিকে সম্মান জানাতে, ‘উৎসব দুবাই’ এবার পূজার থিম হিসেবে বাংলার চিত্রকলা ও আচার-অনুষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে। ‘উৎসব দুবাই’য়ের সদস্যদের হাতে তৈরি পটচিত্র, কাঁথার কাজ, ডোকরা এবং অন্যান্য চিত্রকলার মাধ্যমে এবার মণ্ডপকে সাজানো হবে।
[আরও পড়ুন: ঢাকায় বসে ভারতের জন্য একাই লড়ছেন সৃজিত, ‘দশম অবতার’ মুক্তির দিন শ্বশুরবাড়িতে ‘গৃহযুদ্ধ’!]
কলকাতা শৈলীর পূজামণ্ডপ এবং চন্দননগরের আলোকশিল্প (Light) এবার দুবাইয়ের পূজামণ্ডপকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন শিল্পীরা। দুবাইয়ের আকাশচুম্বী অট্টালিকা ও আলোকঝর্ণার মাঝে কলকাতার শৈলীর পূজামণ্ডপ এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করবে। প্যান্ডেলে যেন এক মুক্তকল্পিত জগৎ, যেখানে শিল্পকর্মের জাদুকরী স্পর্শে সব কিছুই জীবন্ত হয়ে উঠবে। দুর্গাপূজা মানে সাংস্কৃতিক উৎসব। এই উৎসবের প্রাণ হল ঢাকের বাদ্যি। আর সেটা ছাড়া দুর্গাপূজা অসম্পূর্ণ। ঢাকের বাদ্য উৎসবের প্রাণ। ঢাকের দ্রুত লয় সকলকে উদ্বেলিত করে তোলে। এবছরের দুর্গাপূজায় কলকাতা থেকে ঢাকিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুবাইয়ে।
আর ভোজনরসিক বাঙালির রসনার পূর্তি না হলে পূজার আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ থাকে। এবছরের দুর্গাপূজায় তাই বাঙালি খাবারের এক বিশাল আয়োজন হয়েছে ‘উৎসব দুবাই’য়ে। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমার সুরে ‘আয় রে বোঝা হাঁড়ি হাঁড়ি/ মণ্ডা মিঠাই কাঁড়ি কাঁড়ি/ মিহিদানা পুলি পিঠে জিবে গজা মিঠে মিঠে’ গাওয়াই যাবে এই পুজোয়। এছাড়াও থাকবে লুচি-আলুর দম, মাছের ঝোল, বিরিয়ানি এবং আরও অনেক লোভনীয় সব পদ। এই সুস্বাদু খাবারগুলো তৈরির জন্যে কলকাতা থেকে বিখ্যাত রন্ধনশিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মহালয়া থেকেই জনজোয়ার, পঞ্চমীর সন্ধেয় বন্ধ হয়ে গেল শ্রীভূমির ‘ডিজনিল্যান্ডে’র লাইট শো]
দুর্গাপূজার শেষদিনে, রঙের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন বাঙালিরা। সিঁদুর খেলার আনন্দময় অনুষ্ঠানে বিবাহিত মহিলারা একে অপরকে এবং দেবী দুর্গাকে সিঁদুরে বরণ করে নেন। জানান বিদায়। ‘উৎসব দুবাই’য়ের সিঁদুরমাখা নারী সদস্যদের মনোমুগ্ধকর নৃত্য ও দেবীকে বিদায় দেওয়ার দৃশ্যটি হৃদয়স্পর্শী এক মুহূর্ত, যা বিষাদে নয়, উৎসবের এক আনন্দময় সমাপ্তি ঘটায়।