সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রবাদপ্রতিম লেখক সলমন রুশদি। তাঁর অভিযোগ, ইদানীং ভারতে বাকস্বাধীনতা বিপন্ন। হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধারণাও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। মুসলিমদেরও যে ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে সমাজে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস'-এর লেখক।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম 'ব্লুমবার্গ'-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রুশদি। সেখানে তিনি জানান, ভারতে তাঁর অনেক বন্ধু রয়েছে। মোদি আমলে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ওই বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। রুশদি বলেন, "ভারতের সাংবাদিক, লেখক এবং বিদ্বজ্জনেদের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে যে ভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন।" রুশদির দাবি, ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখার প্রচেষ্টা চলছে। তাঁর কথায়, "হিন্দুরা ভাল, মুসলিমরা খারাপ - এই মর্মেই ইতিহাস লেখার চেষ্টা চলছে। শ্রীবিদ্যাধর সুরজপ্রসাদ নয়পল (প্রয়াত ব্রিটিশ লেখক) একবার 'আহত সভ্যতা' শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন। উনি বলতে চেয়েছিলেন, মুসলিমদের আগমনেই ভারতীয় সভ্যতা জখম হয়েছে। এর নেপথ্যে অনেক বড় শক্তি কাজ করছে।"
ভারতে দীর্ঘদিন বিতর্কিত থেকেছেন রুশদি। ঘটনাচক্রে, তাঁকে নিয়ে যত বিতর্ক হয়েছে, সবই কংগ্রেস জমানায়। ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধীর সরকারের আমলে 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' কার্যত নিষিদ্ধ হয় ভারতে। সরাসরি নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হলেও, বইটি বিদেশ থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। সেই থেকে ভারতের বাজারে বইটি আর পাওয়া যায়নি। বইটির কোনও ভারতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়নি। ২০১৯-এ কলকাতা থেকে সন্দীপন খান নামে এক ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য আদালতে আবেদন করেন। দিল্লি হাই কোর্ট সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি তলব করেছিল। সরকারের তরফে সেই বিজ্ঞপ্তি হাজির করা যায়নি। সম্প্রতি হাই কোর্ট রায় দেয়, যেখানে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিই নেই, সেখানে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে কী করে? তার পর থেকেই রুশদির বিতর্কিত বইটি ভারতের বাজারে আসে।
'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' ভারতে 'নিষিদ্ধ' হওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে থাকে বিজেপি। সেই সময় রাজীব গান্ধী সরকার দাবি করেছিল, বইটি নিয়ে ধর্মদ্রোহের অভিযোগের জেরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়েই এ দেশে বইটির আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। পাল্টা বিজেপির দাবি, সংখ্যালঘু তোষণের অঙ্ক মেনেই বইটি কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়।
বইটির কারণে বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশের রোষেও পড়েছিলেন রুশদি। বইতে ইসলাম ধর্মকে অপমান করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ১৯৮৯ সালে ইরানের তৎকালীন প্রধান ধর্মীয় নেতা ('সুপ্রিম লিডার') আয়াতোল্লা খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন। অপরাধ— 'ধর্মদ্রোহ'। তার পর প্রায় ১৩ বছর অন্তরালে ছিলেন রুশদি। জীবন কাটিয়েছেন বেনামে। প্রতিনিয়ত বন্দি থাকতেন পুলিশি পাহারায়। সেই সময় বইটির অনুবাদকদের উপরেও হামলা হয়। রুশদির বিরুদ্ধে জারি হওয়া মৃত্যু প্ররোয়ানা খোমেইনির মৃত্যুর পর ইরান প্রত্যাহার করে নেয়। তার পর ২০০১ সালে ছদ্মনামের জীবন থেকে বেরিয়ে আসেন লেখক।
তবে রেহাই পাননি রুশদি। ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কে একটি সাহিত্যসভায় তাঁর উপর হামলা হয়। মঞ্চে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি কোপ বসান হামলাকারী। এই ঘটনায় তাঁর একটি চোখও নষ্ট হয়। পরে ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দেয় ভারতের মোদি সরকার। বলা হয়, ''ভারত বরাবরই হিংসা ও কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আমরা সলমন রুশদির উপর এই ভয়ঙ্কর হামলার নিন্দা করছি। কামনা করছি তাঁর দ্রুত সুস্থতারও।'' প্রসঙ্গত, রুশদির উপর হামলার ঘটনায় শিয়া চরমপন্থার যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। হামলাকারী হাদি মাতার গ্রেপ্তারও হন। আমেরিকার আদালতে তাঁর ২৫ বছরের জেলের সাজা হয়েছে।
