সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “তোরা যুদ্ধ করে করবি কী, তা বল…” উত্তরটা দেশ থেকে শুরু সংগঠন কিংবা রাষ্ট্রনেতা, জোটশক্তি – প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা। যুদ্ধ-হামলা-আক্রমণ-নাশকতা মানেই যে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষের প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষতি, জীবনযাত্রায় বড়সড় প্রভাব – একথা সর্বজনবিদিত। সকলেই জানেন এসব করে, হামলা-পালটা হামলা চালিয়ে আখেরে লাভের লাভ কিছু হয় না। তবু বন্দুক চলে, গ্রেনেড ফাটে, আত্মঘাতী বিস্ফোরণ (Suicide Blast) করে নিমেষে একাধিক মানুষকে মেরে ফেলা হয়। এই ধারা আজ থেকে একশো বছর আগেও হত, একশো বছর পরেও হয়ত অব্যাহত থাকবে। তবে একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, আগের থেকে হামলার রীতিনীতি তথা রণকৌশল অনেকটাই বদলেছে।
আফগানিস্তান (Afghnaistan) হোক বা লিবিয়া, সিরিয়া হোক বা ইয়েমেন (Yemen) – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাশকতার নয়া ক্ষেত্র হল শহুরে এলাকা। শহরের ভিড়ভাট্টাপ্রবণ এলাকা, এমন জায়গা, যেখানে সাধারণ মানুষের বসবাস বেশি, সেই সব স্থানকেই অধুনা হামলা চালানোর জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে। আর তার ফল এই যে–শহুরে এলাকায় হওয়া নাশকতা-হামলার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ। আর শুধু তাই নয়। বর্তমানে শহুরে বাসিন্দারাই রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে, যে কোনও সময় অতর্কিত আক্রমণের মুখে পড়ে প্রাণ দিতে হতে পারে তাঁদের, কিংবা হতে পারেন গুরুতর আহত।
[আরও পড়ুন: প্রযুক্তি হাতিয়ে নিতে পারে চিন, সমুদ্রে ভেঙে পড়া এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উদ্ধারে মরিয়া আমেরিকা]
পাশাপাশি জীবনযাত্রার উপর যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে, তা বলাই বাহুল্য। চাঞ্চল্যকর এই পরিসংখ্যান দিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের (United Nations) মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ। এই নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে জানিয়েছেন উদ্বেগও। ঠিক কী বলেছেন তিনি? নাশকতার পরিবর্তিত ট্রেন্ড অনুযায়ী, ভিড়ভাট্টাপূর্ণ স্থানে হামলা হলে ক্ষতির বহর বেড়ে যায়। মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়ে, তেমনই হয় সম্পদের ক্ষতি। আর তা নিশ্চিত করার জন্যই বিস্ফোরক পদার্থ, বোমা প্রভৃতি বাজার, বাস টার্মিনাল, হোটেল-সহ জনবহুল স্থানগুলিতেই রাখা হয়। এর প্রভাব সূদূরপ্রসারী।
[আরও পড়ুন: ‘আফগানদের পরিত্যাগ করতে পারে না বিশ্ব’, বার্তা উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রসংঘ প্রধানের]
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে উদাহরণস্বরূপ গুতেরেজ তুলে ধরেছেন গত বছর গাজায় হওয়া হামলার কথা। ইজরায়েল এবং হামাস জঙ্গিদের মধ্যে হওয়া সেই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের ফল ভুগতে হয়েছিল নিরীহ, সাধারণ মানুষকেই। উপদ্রুত এলাকার একাধিক স্কুল এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাও। ফলস্বরূপ, অন্তত ৮ লক্ষ মানুষের ঘরে, কলে জল আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ২০২১ সালের মে মাসে, একটি হাই স্কুলের বাইরে যে বড়সড় হামলা হয়েছিল, তাতে শুধুমাত্র ৯০ জন পড়ুয়ারই মৃত্যু হয়নি। আহত হয়েছিলেন আরও ২৪০ জন সাধারণ মানুষ, যাঁদের অনেকেই এখনও সেই আঘাতের বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। বড়সড় নাশকতার জেরে শহরাঞ্চলেও অনাহারে থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় বহু স্থানে। আবার বিস্ফোরণে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে তা গড়ে তোলার মতো সামর্থ্যও থাকে না অনেক শহরবাসীর।