সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকা ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে সংঘাতের আবহ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। অনেকদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে এবার ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এক টিভি অনুষ্ঠানে দাবি করলেন, আমেরিকার মোকাবিলায় তাঁর দেশ পাঁচ হাজার রুশ বিমানধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে।
তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ''আমাদের কাছে ৫,০০০ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা দেশের শান্তি ও স্বাধীনতা রক্ষা করবে। স্বল্প-পাল্লার বিমান হামলা প্রতিরোধের জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।'' পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী মাতৃভূমির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করতে প্রস্তুত। আগেও তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। গত সেপ্টেম্বরেই তিনি বলেন, “মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দেশের শাসন ব্যবস্থা বদলের চেষ্টা করছে আমেরিকা।” পালটা মাদুরোকে গ্রেপ্তারের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ট্রাম্প সরকার। যে অঙ্ক ছিল ৯/১১-র মূল মাথা ওসামা বিন লাদেনেরও নাম।
সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার বেশ কয়েকটি নৌকা ধ্বংস করেছে। দাবি করেছে, সেগুলি মাদক বহন করছিল। যদিও ভেনেজুয়েলা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আসলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই মাদুরোর বিরোধিতা করে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়ে একে যুক্তরাষ্ট্র মাদকবিরোধী অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এরপরই এই মার্কিন অভিযান তাদের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে তোপ দেগেছিল। সেই থেকেই উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে।
মাদুরোকে বরাবরই একজন মাদক পাচারকারী বলে অভিযুক্ত করেছে আমেরিকা। পাশাপাশি অভিযোগ এনেছে, তিনি নাকি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে ফেন্টানাইল-মিশ্রিত কোকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করছেন। সব মিলিয়ে ৭ টন কোকেন আমেরিকায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন মাদুরো, অভিযোগ তেমনই। ২০২০ সালে ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক-সন্ত্রাসবাদ এবং কোকেন পাচারের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বলে রাখা ভালো, ভেনেজুয়েলা ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত আজকের নয়। ভেনেজুয়েলা 'পুঁজিবাদী' আমেরিকার বৈদেশিক নীতির সমালোচনা করে এসেছে। অন্যদিকে আমেরিকাও লাগাতার ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
প্রায় একশো বছর আগে ভেনেজুয়েলায় তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছিল। ২০ বছরের মধ্যে, ভেনেজুয়েলা বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। একে ল্যাটিন আমেরিকার সৌদি আরব বলা হত। গত শতকের পাঁচের দশকে ভেনেজুয়েলা বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ ছিল। কিন্তু আজ তার অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। বিবিসির প্রতিবেদনের দাবি, গত সাত বছরে প্রায় পঁচাত্তর লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে চলে গেছে।
