সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চারদিনের ঐতিহাসিক মার্কিন সফরে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi in US)। ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) জমানার ‘হাউডি মোদি’র পর এবার জো বাইডেন (Joe Biden) সাক্ষাতে গিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এই নেতা। বিশ্বের কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর এই সফরকে। অনেকেই বলছেন, ট্রাম্প-বন্ধু মোদির বাইডেনের(PM Modi Biden) সঙ্গে নৈশভোজ দেখতে সাধারণ মনে হলেও এর মধ্যেই রয়েছে কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট। কেন বলা হচ্ছে এমন?
মোদির মার্কিন সফর নিয়ে ভাবতে গেলেই ঘুরেফিরে আসছে এর প্রেক্ষাপটের কথা। মূলত, সস্ত্রীক বাইডেনের আমন্ত্রণেই সেদেশে গিয়েছেন মোদি। কিন্তু আমন্ত্রণ আবহেই উঠে আসছে মোদি-বাইডেনের কূটনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতের রোজনামচাও।
[আরও পড়ুন: ‘মোদির কাছে মণিপুরের কোনও গুরুত্বই নেই’, সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা রাহুলের]
প্রধানত, দুই দেশের সম্পর্ক বিস্তারের লক্ষ্য তো বটেই। একাধিক চুক্তি এবং অন্যান্য একাধিক দেশের সামনে নিজেদের সম্পর্ককে তুলে ধরার ‘ছক’ও রয়েছে এই সফরের উদ্দেশ্য। কূটনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, বিরাট আয়োজনের ভোজ থেকে শুরু করে ‘বন্ধু’র স্ত্রীকে হিরে উপহার, হোয়াইট হাউসে (Whitehouse) যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন, সবক্ষেত্রেই রয়েছে আসলে নানা প্রসঙ্গ।
[আরও পড়ুন: রাষ্ট্রসংঘে মোদির যোগ অধিবেশনে নয়া গিনেস বুক রেকর্ড, অংশ নিল ১৮০ দেশের প্রতিনিধি]
ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই দ্বিতীয়বার মার্কিন কংগ্রেসে (US Congress) ভাযণ দেবেন মোদি, যা ঐতিহাসিক! পরপর আমেরিকার দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আমলেই এই কৃতিত্বের অংশীদার হচ্ছেন মোদি। এখানেই শুরু হয়েছে জল্পনা। সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এলন মাস্কের (Elon Musk) সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে জিল বাইডেনের ডাকে নৈশভোজ। সব ক্ষেত্রেই মোদির কৌশল রয়েছে ছড়িয়ে।
ভারতের ‘শত্রু’ দেশ পাকিস্তানের (Pakistan) সঙ্গে সুসম্পর্ক চিনের। অন্যদিকে সীমান্তে উত্তেজনাকে কেন্দ্রে রেখে ভারতের সঙ্গে রীতিমতো আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বেজিংয়ের! এই পরিস্থিতিতেই সুযোগ বুঝে ভারতকে ব্যবহারের পথে এগিয়েছে আমেরিকা। ঠিক এই অস্ত্রেই ক্রমশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন ওবামা, ট্রাম্প, বাইডেনরা।
মোদির এই সফরে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে দুই দেশের মধ্যে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী হওয়ার তাগিদে আমেরিকা থেকে একের পর এক সরঞ্জাম কিনেছে নয়াদিল্লি। এই সফরের আবহেই প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ৩১টি ৩১এম কিউ-৯বি ড্রোন কিনতে চলেছে ভারত। শুধু তাই-ই নয়, একাধিক যুদ্ধবিমান সরবরাহের ক্ষেত্রেও বারবার আমেরিকার সাহায্য পেয়েছে ভারত।
মোদির এই চারদিনের সফরে আমেরিকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সাহায্য নিয়েও রয়েছে কূটনৈতিক জল্পনা। অনেকেই বলছেন, এই বিষয়েও কৌশলই রপ্ত করেছে বাইডেনের দেশ। প্রসঙ্গত, ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার (Russia) কাছ থেকেও নানান প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনে ভারত। ঠিক এই আবহেই রাশিয়ার প্রভাবেও হাত বাড়াতে চাইছেন বাইডেন। এখানেই এশিয়ার সর্বাধিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টাও রয়েছে এস জয়শংকরদের।
আমেরিকা, ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে এই সফরে। প্রবাসী ভারতীয় থেকে টাইপ টু (Type 2 Visa) ভিসা সমস্যা, সব বিষয়েই নজর থাকবে নরেন্দ্র মোদি এবং বাইডেনের আসন্ন বৈঠকে। দাবি, আসলে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে চাইছেন মোদি, বাইডেন। চিন, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইউক্রেন-রাশিয়া আবহে বিশ্বকে ক্ষমতা জাহিরের অবকাশ। যার সবটাই উঠে আসছে এই সফরকে কেন্দ্র করে।