সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আলো মানুষ জ্বালে, যুদ্ধের মতো অন্ধকারও মানুষের তৈরি। সেই অভিশাপে আজ বড়দিনে বিষণ্ণ ‘যিশুর বাড়ি’। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের আবহে যিশুক্রিস্টের জন্মস্থান বেথলেহেমেই উৎসব নেই! বরং মন খারাপের হাওয়ায় উড়ছে তীব্র বারুদের গন্ধ। অন্য বছর এই দিনে আলো ঝলমল করে প্যালেস্টাইনের ইজরায়েল অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ছোট্ট শহরটি। পূণ্যার্থীদের ভিড়ে উষ্ণ হয়ে ওঠে গলি থেকে রাজপথ। গোটা পৃথিবীর পর্যটকদের আনাগোনায় ভরে ওঠে সমস্ত হোটেল। গান-বাজনা, শোভাযাত্রা, ক্রিসমাস ট্রি, মহাপুরুষের জন্মবৃত্তান্তে সেজে ওঠে শহর। নতুন পোশাকে হাসিমুখ মানুষ। চারপাশে আনন্দযজ্ঞের আবাহন। ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর কী পরিস্থিতি?
বেথলেহেমে যিশু নেই, সান্তা নেই, হরিণ নেই, আশীর্বাদ, আনন্দ নেই। নেই নেই নেই! বড়দিনেও জনশূন্য থমথমে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। যুদ্ধের আবহে বেথলেহেমে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানটুকু ছাড়া সবই বাতিল হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পরেই সবকিছু বদলে যায়। কার্যত প্যালেস্টাইন এবং ইজরায়েল, দুই দেশের নাগরিকরাই ভালো নেই। সকলেই কম-বেশি আতঙ্কে ভুগছেন। গাজার কথা যত কম বলা যায় তত ভালো। ক্রিসমাস, বড়দিন বললে সবার আগে মনে পড়ে যে ছোটদের কথা, নারকীয় যুদ্ধে তাদেরও মৃত্যু হয়েছে। কেউ কেউ বিকলঙ্গ, দুবেলা খাবার জুটছে না অনেকের। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গাজায় নিহতের সংখ্যা ২০,৪২৪ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, জখম ৩৮৪ জন। ২৩ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া।
[আরও পড়ুন: প্রেম প্রস্তাবে ‘না’, দলীয় কার্যালয়ে ডেকে ছাত্রনেত্রীর ‘শ্লীলতাহানি’ TMCP নেতার]
উল্লেখ্য, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও জেরুজালেমে ৫০ হাজার খ্রিস্টান থাকেন। এমনকী গাজাতেও আনুমানিক ১৩০০ খ্রিস্টান বসবাস করেন। অসহায় অবস্থায় রয়েছেন এই সব প্যালেস্টাইনি খ্রিস্টানরা। যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বেথলেহেম-সহ অন্য প্যালেস্টাইনি শহরগুলোতেও। বলে রাখা ভালো, বড়দিনের উৎসব বাতিল হওয়া বেথলেহেম নগরবাসীর রুটিরুজির জন্যেও বড় ধাক্কা। বাসিন্দাদের ৭০ শতাংশ উপার্জনই হয় বছরের এই সময়টা। যদিও এবার হাতেগোণা পর্যটক দেখা গিয়েছে শহরে। জানা গিয়েছে, ৭০টি হোটেল জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ফলে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এর থেকেই প্রমাণিত যুদ্ধ কখনই সমাধান হতে পারে না। বরং নতুন অন্ধকার ডেক আনে।
[আরও পড়ুন: প্রেম প্রস্তাবে ‘না’, দলীয় কার্যালয়ে ডেকে ছাত্রনেত্রীর ‘শ্লীলতাহানি’ TMCP নেতার]
বেথলেহেমের রাস্তায় যিশু, মা মেরির মূর্তি বিক্রি করেন রনি তাবেশ। তিনি বলেন, “কমপক্ষে দুই মাস হয়ে গেল পূণ্যার্থী এবং পর্যটকদের দেখা নেই। দোকান খুলতে হয় তাই খুলি। আমরা চাই ফের সবকিছু স্বাভাবিক হোক।” আলা সালমেহ নামের ছোট দোকান মালিক বলেন, “আগের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেচাকেনা হচ্ছে।” আরও বলেন, “শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। বেথলেহেম সেই শহর যেখান শন্তির জন্ম হয়েছিল।” বলা বাহুল্য তিনি যুগপুরুষ যিশু। তাঁর আশীর্বাদে যুদ্ধ থামুক, চাইছে গোটা বিশ্ব।