সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আগুন লাগলে নিজের জীবন বিপন্ন করেও বিপদ সামলাতে ঝাঁপিয়ে পড়ার শিক্ষা দিয়েছে তাঁর পেশা। অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের সময়েও সেই শিক্ষা কাজে দিয়েছিল তাঁর। কিন্তু এ যাত্রায় অনেকের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন নিউ সাউথ ওয়ালসের রুরাল ফায়ার সার্ভিসের দমকল কর্মী অ্যান্ড্রিও ও’ড্রয়ার। সকলের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ওই দমকল কর্মী চলে গিয়েছেন। রেখে গিয়েছেন তাঁর ছোট্ট কন্যাসন্তানকে। একরত্তি ওই কন্যা জানে না তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ মারা গিয়েছে। বাবার শেষযাত্রায় উপস্থিত থাকলেও কিছুই বুঝতে পারেনি খুদে। তার মাথাতেই পরিয়ে দেওয়া হয় দমকল কর্মী বাবার হেলমেট।
গত ১৯ ডিসেম্বর দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চল। খবর পাওয়া মাত্রই দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান। সেই দলেই ছিলেন অ্যান্ড্রিও ও’ড্রয়ার। দমকলের গাড়িতে তখন ছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময় অগ্নিদগ্ধ গাছ ওই গাড়ির উপর পড়ে যায়। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে গাড়িটিও। প্রাণ বাঁচাতে পারেননি দমকল কর্মী। ওই গাড়ির পাশাপাশি তিনিও পুড়ে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি ক্যাপ্টেন জিওফ্রে কেওটন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁরও।
[আরও পড়ুন: থমথমে মধ্যপ্রাচ্য, শান্তি স্থাপনে ‘বন্ধু’ ভারতের সাহায্য চাইল ইরান]
দীর্ঘদিন ধরেই নিহত ওই দুই দমকল কর্মী নিউ সাউথ ওয়ালসের রুরাল ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অ্যান্ড্রিও ও’ড্রয়ারকে শেষশ্রদ্ধা জানান তাঁর সহকর্মীরা।
সেই শোকসভাতেই উপস্থিত ছিল অ্যান্ড্রিও ও’ড্রয়ারের একরত্তি মেয়েও। ফুলে ঢাকা বাবার কফিনবন্দি দেহের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও, পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নেই একরত্তির।
সাদা পোশাকের ওই শিশুর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় নিহত দমকল কর্মী বাবার হেলমেট। খুদেকে তার বাবার মেডেলও পরিয়ে দেওয়া হয়।
শেষকৃত্যের আগে চার্চের ফাদার ওই খুদেকে বলেন, “জানা প্রয়োজন তোমার বাবা একজন বিশেষ ব্যক্তি। আত্মস্বার্থ নিয়ে তিনি ভুলেও ভাবতেন না। তিনি সত্যিই মহান।” ফাদারের একথা শুনে চোখের জলে ভাসলেন প্রায় সকলেই। মহান দমকল কর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চার্চের বাইরেও ভিড় জমান বহু মানুষ। স্বজনহারাদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী গোটা এলাকা।
উল্লেখ্য, দাবানল নেভাতে গিয়ে মৃত্যু হয় জিওফ্রে কেটনের। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে শেষ সম্মান জানান সহকর্মীরা। সকলে মিলে মরণোত্তর ‘গার্ড অফ অনার’ দেন তাঁকে। পরে পা মেলান তাঁর শেষযাত্রায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। জিওফ্রের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলসের রয়্যাল ফায়ার সার্ভিসেস কমিশনার ক্রেগ ফিৎজসিমনস। তিনিই পিতৃহারা হার্ভের কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে তার শার্টে মেডেল আটকে দেন। উলটোদিকে দাঁড়িয়ে তখন হার্ভের মা জেস হায়েস। সকলের চোখেই জল। আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে যান প্রত্যেকে।
The post অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে মৃত্যু দমকল কর্মীর, শেষকৃত্যে একরত্তির মাথায় বাবার হেলমেট appeared first on Sangbad Pratidin.