ধীমান রায়, কাটোয়া: জন্ডিস বাসা বেঁধেছিল শরীরে। দীর্ঘ পথের ক্লান্তিতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাত-পাও ফুলে যেতে থাকে। কাটোয়ার বছর তেইশের পরিযায়ী শ্রমিক ভেবেছিলেন, বাড়িতে কোনওরকমে ফিরে যেতে পারলে পরিবারের যত্ন আর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু করোনা আতঙ্কে তাঁর সেই আশা পূরণ তো হলই না। উলটে প্রতিবেশীদের সন্দেহের মুখে পড়ে গ্রামে ঢুকতে না পেরে চিকিৎসায় বিলম্ব এবং মৃত্যু। বর্ধমানের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হল বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে পরিযায়ী শ্রমিকের।
পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার মণ্ডলহাটের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মণ্ডল মাস ছয়েক আগে রাজস্থানে যান। জয়পুরের একটি হোটেলে কাজ করছিলেন তিনি। তাঁর বাবা তপন মণ্ডলের কথায়, “সেখানেই জন্ডিস হয় আমার ছেলের। চিকিৎসা হচ্ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে ও উপযুক্ত ওষুধ-পথ্যের অভাবে সুস্থ হচ্ছিল না। সেকথা আমাদের ফোন করে জানাত ছেলে। বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করছিল। আমরাও অপেক্ষায় ছিলাম কখন বাড়ি আসবে।”
[আরও পড়ুন: বাড়িতে ঢুকে গুলি, আসানসোলে ১২ বছরের কিশোর খুনের ঘটনায় ঘনীভূত রহস্য]
এরপর জয়পুর থেকে রবিবার বিশ্বজিৎ বর্ধমানে নামার পর একটি টোটোয় চড়ে দুপুরে মণ্ডলহাটে পৌঁছায় বিশ্বজিৎ। তপনবাবু জানান, তখন ছেলের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পা-হাত ফোলা ছিল। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বিশ্বজিৎ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া হাসপাতালে রাজস্থানে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখানোর পর বিশ্বজিতকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেন চিকিৎসক। তপনবাবুর কথায়, “হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে কয়েকজন প্রতিবেশী ছেলেকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেন। গ্রামের অন্য কোনও সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেও থাকতে দেওয়া হয়নি। আমরাও কিছুতেই পাড়ার লোকজনদের রাজি করাতে পারিনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতে জানিয়েও লাভ হয়নি।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার কয়েক ঘন্টা টানাপোড়েনের পর বিশ্বজিৎ আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাটোয়া হাসপাতাল থেকে বর্ধমানের কোভিড হাসপাতালে পরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে কাটোয়া ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, “ওই যুবককে কাটোয়া হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল পুলিশের সহযোগিতায় এবং তারপর বর্ধমানে চিকিৎসায় পাঠানোর পর মারা যায় বলে শুনেছি।”
[আরও পড়ুন: যৌনাঙ্গ ও শ্বাসনালী কেটে শ্যালককে খুনের অভিযোগ ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে, চাঞ্চল্য মুর্শিদাবাদে]
বিশ্বজিতের পরিবারে দাবি, পাড়ার লোকজনদের বাধার কারণেই অযত্নে, অবহেলায় মৃত্যু হল তাঁদের সন্তানের। করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক ও ভুল ধারণার ফলে একটি প্রাণের মাশুল গুনতে হল বলে মনে করছেন অনেকে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক প্রশান্তরাজ শুক্ল জানিয়েছেন, ”অযথা করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া অনুচিত। এনিয়ে মানুষকে সচেতন করা হবে। ওই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
ছবি: জয়ন্ত দাস।
The post করোনা সন্দেহে গ্রামে ঢুকতে বাধা, চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় প্রাণ গেল জন্ডিস আক্রান্ত যুবকের appeared first on Sangbad Pratidin.