অতিমারীতে এদের কেউ হারিয়েছে বাবাকে। কেউ বা মাকে। কেউ কেউ দু’জনকেই হারিয়ে নিঃস্ব, বিপন্ন। এমন শিশুদের পাশে দাঁড়াতেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ও ‘ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ’র মানবিক প্রয়াস ‘আদর’। এমন শিশুদের সন্ধান জানাতে পারেন আপনিও। যোগাযোগ করুন ৯০৮৮০৫০০৪৮ নম্বরে।
অভিরূপ দাস: মা মারা গিয়েছিল বছর দুয়েক আগে। একা হাতে বাবাই সামলাচ্ছিল সব কিছু। স্কুলে পৌঁছে দেওয়া থেকে নানান আবদার মেটানো। করোনার এক ঘা মুছে দিল শেষ সম্বলটুকুও। নিজের বলতে এই মুহূর্তে কেউ নেই স্নেহশ্রী কুণ্ডুর। দূর আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে মা-বাবা। বছর বারোর কিশোরীর ঠাঁই হয়েছে মাসি-মেসোর ঘরে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আত্মীয়রা। কিশোরীর পড়াশোনা মাঝপথেই বন্ধ হবে না তো?
বরানগর থানা এলাকার টবিন রোডের বাসিন্দা স্নেহশ্রীরা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে গায়ে আগুন লেগে মারা যান তার মা। মাত্র ছত্রিশে স্ত্রীর অকাল প্রয়াণ, শোকে গুম মেরে গিয়েছিলেন স্নেহশ্রীর বাবা উত্তম কুণ্ডু। হঠাৎ মাকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েছিল স্নেহশ্রীও। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছিলেন বছর উনচল্লিশের উত্তমবাবু। বুঝেছিলেন তিনি ভেঙে পড়লে মেয়েকে মানুষ করা অসম্ভব।
[আরও পড়ুন: COVID-19: রাজ্যে বাড়ল করোনা বিধিনিষেধের মেয়াদ, দেখে নিন কোন ক্ষেত্রে মিলল ছাড়]
ভাঙাচোরা সংসার ফের একটু একটু করে জোড়া লাগিয়েছিলেন। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসা, খাতাবই কিনে দেওয়া। জন্মদিনে আবদার মেটানো। সবই করতেন তিনি। সোনার গয়নার কারিগরের কাজ করতেন উত্তমবাবু। স্ত্রী বসতেন বরানগরের কসমেটিক জুয়েলারির দোকানে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সেই দোকানে নিয়মিত বসতেন উত্তম।
মেয়েকে নিয়ে ছিল তাঁর হাজারও পরিকল্পনা। সবকিছুতে জল ঢেলে দিল ভাইরাস। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জ্বর আসে উত্তমের। লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতেই রিপোর্ট এল, কোভিড পজিটিভ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল দ্রুত। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে (R G KAR MEDICAL COLLEGE) ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখান থেকে ১৪ মে এল খারাপ খবর।
[আরও পড়ুন: Coronavirus: করোনা কেড়েছে বাবার প্রাণ, পড়াশোনা ভুলে দিন গুজরানের চিন্তায় দুই ভাইবোন]
ছোট্ট স্নেহশ্রী জানিয়েছে, “ভেবেছিলাম বাবা ঠিক ফিরে আসবে। একদিন দাদু-দিদা বলল, বাবা নাকি আর কোনওদিন আসবে না।” দু’বেলা মা-বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদত কিশোরী। কিন্তু চোখের জল মুছিয়ে দেওয়ারও লোক ছিল না। হাতিবাগানের ডাফ স্কুলের ছাত্রী বিড়বিড় করে, “কী এমন অপরাধ করেছি, ঈশ্বর আমার মা-বাবা দু’জনকেই নিয়ে নিল?”
পাড়াপড়শিরা তাকে বোঝান, তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো। ওঁরা সবসময় তোমার পাশেই আছেন। বাড়িতে লোক বলতে বৃদ্ধ দাদু-দিদা। তাঁদের পক্ষে নাতনিকে দেখা কার্যত অসম্ভব। স্নেহশ্রীকে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়েছে মাসি-মেসো। মাসির বাড়ি গিরিশ পার্কের (Girish Park ) কাছে রামতনু বোস লেনে। মেসো অভিষেক কুণ্ডুর নিজের একটি মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়েকে বড় করার মতো সামর্থ্য নেই তাঁর।অভিষেকবাবুর কথায়, “এত অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারাল। ওকে দেখলে কষ্ট লাগে।” স্নেহশ্রীর পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়, এটাই আপাতত তাঁর একমাত্র সংকল্প।
[আরও পড়ুন: COVID-19 UPDATE: একধাক্কায় অনেকটা কমল কলকাতার সংক্রমণ, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার বলি ৬]
পাশে চাই আপনাকেও
এই সবহারানো অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারেন আপনিও। সরাসরি অর্থসাহায্য পাঠানো যাবে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অ্যাকাউন্টে।
State Bank of India, Ballygunge Branch,
A/C No : 30391077575
IFS Code : SBIN0003951
Mobile : 9433607740 (Debashish Maharaj)
বিঃ দ্র: টাকা পাঠানোর পর আপনার নাম,ঠিকানা ও সাহায্যের পরিমাণ স্ক্রিনশট-সহ হোয়াটসঅ্যাপ করুন 9433607740 ও 9088050048 নম্বরে। আমরা যথাসময়ে তা প্রকাশ করব। সাহায্যকৃত অর্থ 80G ধারা অনুযায়ী করমুক্ত।