সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের সাক্ষী ১৫ আগস্ট। এদিন আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের অনেকেই। সেদিন রাজধানী ঢাকার ৩২নং ধানমণ্ডির বাসভবনে সিঁড়ির মাঝখানে ঘাতকের গুলিতে ঝাঁজরা হওয়া নিথর দেহ পড়েছিল স্বাধীনতার মহানায়কের। পড়েছিল বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের রক্তাক্ত দেহ। গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। পাশেই ছিল তাঁর ভাঙা চশমা ও অতিপ্রিয় তামাকের পাইপটি।
[ডোকলামের দখল পেতে চিনের হাতিয়ার ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’]
শুধু মুজিবকে হত্যা করেই সেদিন ক্ষান্ত থাকেনি আততায়ীরা। নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল তাঁর পরিবারের ২৮জন সদস্যকে। ওই অভিশপ্ত ঘরেই একটি কক্ষে পড়ে ছিল শেখ কামাল ও টেলিফোন অপারেটরের লাশ। বেডরুমের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল ও দুই পুত্রবধূর মাঝখানে বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত ১২ বছরের শিশু শেখ রাসেলের লাশ। বঙ্গবন্ধুর ছো্টভাই নাসের-সহ এদিন প্রাণ হারান অনেকেই। এদিনই ঘাতকের বুলেটে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলিগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, পুত্র শহিদ সেরনিয়াবাত, আরিফ, রিন্টু প্রমুখ। তবে দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। ঘাতকরা সেদিন বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদেরই কেবল হত্যা করেনি, বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দুকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। সেই শোকাবহ দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধু ও নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করা হবে। এদিন দেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা। আওয়ামি লিগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির বাসভবন-সহ তিনটি বাড়িতে খুনিরা চালিয়েছিল হত্যাযজ্ঞ। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। তাই এই দিনটির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনগুলিতে পতাকা উত্তোলন করে বাকি আড়ম্বড়পূর্ণ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হবে।
[বাংলাদেশ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ কাণ্ডে ২০ বছরের জেল ১৪ জামাত জঙ্গির]
১৯৭৫ সালের ভোরে বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্ক লেপন করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ঘাতকরা রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে খুনিদের বিচারের আওতায় এনে ফাঁসির দড়ি পড়িয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শুধু এদেশের স্বাধীনতার স্থপতিই ছিলেন না, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন-সহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেই তার ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।