অর্ণব আইচ: তখন পার্ক স্ট্রিটে জমজমাটি ভিড়। হঠাৎই চিৎকার এক যুবতীর। পলাতক ব্যক্তির পিছনে দৌড়চ্ছেন দম্পতি। ভিড়ের মধ্যে মিশে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করলেও যুবতী ও তাঁর স্বামী তাড়া করে ধরে ফেললেন ‘অভব্য রোমিও’কে। একইভাবে বাসস্ট্যান্ডে এক তরুণীর শ্লীলতাহানি করে পালানোর আগেই তাড়া করে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন তরুণী। বড়দিনের রাতে পার্ক স্ট্রিট এলাকায় আলাদা দুই শ্লীলতহানির অভিযোগ। দুই ‘বীরাঙ্গনা’ই ধরে ফেললেন দুই রোমিওকে। শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশের হাতে আলাদাভাবে গ্রেপ্তার হয়েছে সোমনাথ দাস ও শঙ্কর রাও নামে দু’জন। বড়দিনের রাতে পার্ক স্ট্রিট সহ সারা শহরজুড়ে মদ্যপান করে গোলমাল ও বেলেল্লাপনায় অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ২০৭ জন। ৩৯ লিটার বেআইনি মদ উদ্ধার হয়েছে।
শনিবার ও রবিবার রাতে বড়দিন পালন করতে পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি ও তার সংলগ্ন এলাকায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড়। এই ভিড় দেখে হতবাক পুলিশকর্তারাও। তাঁদের প্রশ্ন, তবে বর্ষবরণের রাতে কত ভিড় হবে পার্ক স্ট্রিটে? প্রথমে বর্ষবরণের রাতে আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য হাজার তিনেক পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ভিড়ের বহর দেখে লালবাজারের কর্তাদের ধারণা, পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের রাতে। পাঁচ হাজার বা তারও বেশি সংখ্যক পুলিশ থাকতে পারে সেদিন।
[আরও পড়ুন: কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের ইতি! জোকা-তারাতলা মেট্রোর উদ্বোধনে আমন্ত্রিত মোদি, মমতা]
বড়দিনে ভিড়ের মধ্যে পরপর দু’টি শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। এর পর এই ধরনের ঘটনা রুখতেও গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। তাই বর্ষবরণের রাতে পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ ও মহিলা পুলিশের টিম মোতায়েন করার উপর বেশি জোর দিচ্ছে লালবাজার। জনতার মধ্যে মিশে গিয়ে নজরদারি চালাবে এই মহিলা টিম। একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের মহিলা বাহিনী ‘উইনার্স’ও বেশ করে টহল দেবে ওই এলাকাগুলিতে।
যদিও পুলিশের মতে, বড়দিনের রাতে যদি ওই যুবতী ও তরুণী প্রতিবাদ না করে উঠতেন, তাহলে সহজে ধরা পড়ত না ওই রোমিওরা। প্রথম ঘটনাটিতে দক্ষিণ কলকাতার দম্পতি পার্ক স্ট্রিট এলাকায় বেরনোর সময় অভিযুক্ত খুব কাছাকাছি চলে আসে তাঁদের। ভিড়ের মধ্যেই অভিযুক্ত ওই যুবতীর শ্লীলতাহানি করে। অভিযুক্ত ব্যক্তির স্পর্শ পেয়েই যখন তিনি চিৎকার করে ওঠেন, তখন সে বেগতিক বুঝেই দৌড়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার পিছনে তাড়া করেন ওই দম্পতি। যতই সে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করুক, তাঁদের নজর এড়াতে পারেনি সে। যুবতী রীতিমতো কলার ধরে ফেলেন ওই ব্যক্তির। তাঁকে সাহায্য করেন স্বামীও। দম্পতির চেঁচামেচিতে ভিড় হয়ে যায়। পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে।
[আরও পড়ুন: বড়দিনে পানশালায় ঢুকে বচসা, কর্মীদের মারধরের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২ বাংলাদেশি]
জওহরলাল নেহরু রোডের উপর বাসস্ট্যান্ডের কাছেও এক তরুণীর পিছু নিয়েছিল অন্য এক যুবক। তিনি বাস ধরার আগেই তাঁর কাছে এসে শ্লীলতাহানি করে সে। যুবক পালানোর আগেই তাকে ধরে ফেলেন তরুণী। তাঁর চিৎকারে পুলিশ ছুটে এসে যুবককে গ্রেপ্তার করে। সোমবার দুই অভিযুক্ত রোমিওকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। দু’টি ঘটনারই তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।