সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারের গৃহযুদ্ধের আঁচ এসে পড়ছে বাংলাদেশে। পড়শি দেশের সেনার ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে মৃত্যু হল ২ জনের। মৃতদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী ও একজন মহিলা রয়েছেন। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বার্মিজ সেনা তথা ‘টাটমাদাও’ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। এর জেরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে দুদেশের সীমান্তে। এর আগেও সেদেশ থেকে গোলাগুলি উড়ে এসে এদেশে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে অনেক বাংলাদেশিই ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, সোমবার বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের উপর মর্টারশেলটি এসে পড়ে। এতেই নিহত হয়েছেন দুজন। মৃতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। মায়ানমারে জুন্টার সঙ্গে আরাকান আর্মির গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোতে অনবরত গোলা আছড়ে পড়ছে। এর আগেও কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর মিলেছিল।
[আরও পড়ুন: ভোটের ‘ফরমান’ না মানায় বধূকে গণধর্ষণ, ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশের আদালত]
এই পরিস্থিতিতে, বিদেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন,মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যদের ফিরিয়ে নেবে দেশটির সরকার। ইতিমধ্যে এনিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে এপর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্র-সহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
দুদিন আগেই বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের সংঘর্ষের জেরে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে রয়েছে। বিজিবি অবশ্য জানিয়েছে, মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩৯ জন সদস্য বাংলাদেশে ঢুকেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সূত্র বলছে, সংঘর্ষের মধ্যে গতকাল ভোরে বিজিপির ১৪ জন সদস্য সীমান্তের ওপার থেকে নাইক্ষ্যংছড়িতে পালিয়ে আসেন। এর মধ্যে আহত ১৫ সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ রয়েছে বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলায়।
অন্যদিকে,মায়ানামারের এই সংঘর্ষের জেরে দেশে ফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী। পড়শি দেশে সংঘর্ষের জেরে কোনওভাবে একজন রোহিঙ্গায়ও দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সমস্ত রকম পদক্ষেপ করছে বিজিবি। পাঁচ বছর আগেও দুপক্ষের সংঘর্ষে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। যাতে চাপ বেড়েছে দেশের সরকারের। হিংসা, মানবপাচার এবং মাদক কারবারের কারণে ভয়ানক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের একাধিক রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি। যা নিয়ন্ত্রণ করতে এখন হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।