গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: একুশে জুলাই (21 July) শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রাণ গেল দুই তৃণমূল সমর্থকের। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনা ঘিরে বুধবার সকালে হাড়োয়ায় গণ্ডগোল বাঁধে বলে অভিযোগ। মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বসিরহাটের হাড়োয়া থানা এলাকা। অশান্তির জেরে দুজনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে একজন ৬০ বছরের বৃদ্ধাও রয়েছেন। জখম আরও অন্তত ৪ সমর্থক।
বসিরহাট মহাকুমার হাড়োয়া (Haroa) থানার মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোহনপুর গ্রাম। গোটা রাজ্যের মতো এখানেও শহিদ দিবস উপলক্ষে জায়ান্ট স্ক্রিনে তৃণমূল (TMC) নেত্রীর বার্তা শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এদিন সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় বলে অভিযোগ। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। তার পর বোমাও ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। চলে গুলিও। ভাঙচুর চালানো হয় স্থানীয় বাড়ি, দোকানে।
[আরও পড়ুন: কবে পালিত হবে ‘খেলা হবে’ দিবস? জানালেন TMC সুপ্রিমো]
অভিযোগ, অশান্তি চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হন বৃদ্ধ লক্ষ্মীবালা দেবী। হাসপাতালে আনা হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ২৮ বছরের যুবক সন্ন্যাসী সরদারকেও বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় বলেও খবর। আর ৪ জন জখম তৃণমূল কর্মীকে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। নামানো হয় র্যাফও। এখনও এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। তবে কী কারণে অশান্তি ছড়াল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
একুশের সভাকে কেন্দ্র করে অশান্তি দানা বাঁধে নাকি পুরনো কোনও অশান্তির জেরে এদিন গণ্ডগোল বাঁধে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার দাপুটে নেতা তপন রায় এবং তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিকের গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি বেঁধেছিল। অঞ্চল সভাপতি ভোটের সময় বিজেপিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতা উত্তর প্রধানের। নির্বাচনের সময় যজ্ঞেশ্বরবাবু বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ তাঁর। উত্তর প্রধানের দাবি, “অঞ্চল সভাপতিকে সরাতে চেয়েছিলাম আমরা। তা নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছিল। পাল্টা এদিন হামলা করে অঞ্চল সভাপতির দলবল।”
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মোহন পুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির যোগেশ্বর প্রামাণিক বলেন, “তপন রায় বেশকিছু বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে, এই নিয়ে আমি উপর মহলকে বহুবার জানিয়েছিলাম, আজকের টেংরামারি তে আমাদের কয়েকজন কর্মী মুখ্যমন্ত্রীর ভার্চুয়াল সভার বক্তব্য শুনছিল সেই সময় তপন রায়ের নেতৃত্বে বেশকিছু বিজেপি কর্মীরা আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, দুই জনকে খুন করেছে, এখনও পর্যন্ত আহত অনেকে।” তবে এই নিয়ে মিনাখাঁ বিধানসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল বলেন, “শুনেছি একটা ঘটনা ঘটেছে, দুজন মারা গিয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, আমরাও দেখছি দোষীদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।”