নব্যেন্দু হাজরা: ভরদুপুর। প্রবল গরমে কোথাও কোনও ছায়া নেই। উপড়ে যাওয়া ট্রেন লাইনে শোয়ানো সারি সারি সাদা কাপড়ে মোড়া লাশ। তার পাশেই মালগাড়ির উপর বিপজ্জনকভাবে উঠে যাওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandal Express) ইঞ্জিন। ট্রেন লাইনের ঢালু জায়গা থেকে একটু নেমে বাঁদিকে তাকালে চোখে পড়ছে ছোট্ট একটা জনপদ। এই জায়গাটার নামই বাহানাগা। বালেশ্বর স্টেশন থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূর। বলা ভাল, দুর্ঘটনাস্থলের সব থেকে কাছের গ্রাম এই বাহানাগাই। শুক্রবার রাতে গ্রাম থেকে ছুটে না গেলে আরও অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।
এক পা-দু’পা করে এগিয়ে ভিড় ছাড়িয়ে পৌঁছে গেলাম গ্রামে। ভিতরে ঢুকে বোঝার উপায় নেই একটু দূরেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। গ্রীষ্মের দুপুরে গাছের পাতায় হাওয়ার শব্দ। এই গ্রামেই থাকেন সুস্মিতা সোরেন, সুশ্রী তন্ময় দাস। এই দুই মহিলাই প্রথমে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডলের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ইঞ্জিনের সামনে। অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন অন্ধকারে ট্রেনলাইনে যেতে। না জানি, কী হয়!
[আরও পড়ুন: ৩ বছর ধরে পথে পথে ঘুরছেন বৃদ্ধা, অবশেষে কলকাতা পুলিশের কর্মীর উদ্যোগে ফিরলেন বাড়ি]
মাটির ঘরের দাওয়ায় বসে সুশ্রী তন্ময় জানালেন, “গিয়ে দেখি ইঞ্জিনটা মালগাড়ির উপরে উঠে গিয়েছে। কে সাহস করে উঠবে? আবছা অন্ধকারে প্রথমে মনে হচ্ছিল একটা বডি মালগাড়ির উপরে ইঞ্জিন থেকে ঝুলছে।” সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে রোনাল্ড দাস। মায়ের কথায় বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সে উঠে পড়ে ইঞ্জিনের উপরে। সুশ্রী বলে চলেছেন, “ওরাই উপরে উঠে দু’জনকে উদ্ধার করে। নিচে নামাতে দেখি ড্রাইভারের জ্ঞান রয়েছে। তাঁকে ধরে গ্রামের দিকে নিয়ে আসি।” পাশে বসা সুস্মিতা সোরেন এখনও যেন কিছুটা ভয়ের মধ্যে, “খুব জোরে একটা আওয়াজ হল। গিয়ে দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। চোখের সামনেই দেখি কয়েকজন মরে গেল।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট জি এন মোহান্তি গুরুতর আহত হয়েছেন দুর্ঘটনায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর ফুসফুস। আইসিইউতে ভরতি সহকারি লোকো পাইলটও গুরুতর জখম।