সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্ডিয়া জোটে ফের অশান্তি। এবার খানিক অপ্রত্যাশিতভাবে অশান্তির খবর আসছে তামিলনাড়ু থেকে। সে রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই জোটে ডিএমকে-কংগ্রেস। এতদিন দেশের অন্য প্রান্তে ইন্ডিয়া জোটে ছোটখাট বিবাদ-অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হলেও তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস-ডিএমকে জোট গত কয়েক বছর মসৃণভাবেই এগিয়েছে। এবার সেই মসৃণতা যেন কোথাও গিয়ে ধাক্কা খেল।
শুরুয়াত কংগ্রেসের ডাটা অ্যানালিসিস টিমের প্রধান প্রবীণ চক্রবর্তীর এক মন্তব্য থেকে। তিনি জোটসঙ্গী ডিএমকে-কে রীতিমতো ক্ষেপিয়ে দিয়ে মন্তব্য করেন, "তামিলনাড়ুর মতো তথাকথিত উন্নত রাজ্যের ঋণের অঙ্কটা উত্তরপ্রদেশের থেকেও বেশি।" ঘুরিয়ে এটা ডিএমকের উন্নয়ন মডেলকে নিশানা। যাতে ক্ষুব্ধ ডিএমকে এবং অন্যান্য শরিক দলের নেতারা। ডিএমকের একাধিক নেতা ইতিমধ্যেই দাবি করছেন, "প্রবীণ ব্যক্তিগত এজেন্ডার জন্য জোটের ক্ষতি করছেন। এতে আরএসএস-বিজেপির লাভ হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।" কিন্তু কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ব্যবস্থা নিতেও নারাজ। তামিলানাড়ুর সাংসদ মাণিকম ঠাকুর মঙ্গলবার বলেছেন, "কংগ্রেস কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সেটাও কি শরিক দল ঠিক করে দেবে?"
আসলে প্রবীণের মতো আরও একাধিক কংগ্রেস নেতা ডিএমকেতে ক্ষুব্ধ। ক্ষোভের মূল কারণ, অসম্মান। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস এবং ডিএমকের জোট যতই মসৃণ হোক, রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসকে সেভাবে গুরুত্ব দেয় না ডিএমকে। লোকসভায় ৩৯ আসনের মধ্যে কংগ্রেসের জন্য ৯ আসন ছাড়া হলেও বিধানসভায় সে তুলনায় অনেক কম আসন ছাড়া হয়। এমনকী, সে রাজ্যে ডিএমকে কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় থাকলেও সরকারে কংগ্রেসের কোনও অংশিদারিত্ব নেই। ২৩৪ আসনের তামিলনাড়ু বিধানসভায় এই মুহূর্তে ডিএমকের দখলে ১৩৩ আসন। কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ১৮। অথচ মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারে মন্ত্রিত্ব দাবি করে আসছেন কংগ্রেস নেতারা। তাতে আমল দেয়নি ডিএমকে।
সদ্যই তামিলনাড়ুতে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করেছেন সুপারস্টার থলপতি বিজয়। শুরুতে বেশ সাড়াও ফেলেছেন। ঘোষণা করেছেন, শরিকদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নিতে কোনও আপত্তি নেই তাঁর। বিজয়ের সেই ঘোষণার পরই কংগ্রেসের একাংশ রাজ্যে ক্ষমতায় ভাগ চেয়ে সরব। একাধিক প্রভাবশালী নেতা দাবি তুলছেন, রাজ্যে অন্তত একজন মন্ত্রী কংগ্রেসি হওয়া উচিত। কারণ, এভাবে দিনের পর দিন ক্ষমতার বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করে গেলে দলের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন। শুধু লোকসভা নির্বাচনের জনপ্রতিনিধি থাকবে, স্থানীয় নির্বাচনে থাকবে না, সেটা হতে পারে না। কংগ্রেসের অন্দরে এই গুঞ্জন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্ট ডিএমকে। কারণ স্ট্যালিনের দল শুরু থেকেই নিজেদের অবস্থানে অনড়। লোকসভায় কংগ্রেসের জন্য জায়গা ছাড়তে তারা রাজি। কিন্তু বিধানসভায় নয়। এর মধ্যে আবার এই প্রবীণ চক্রবর্তীই একাধিকবার বিজয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারপর প্রকাশ্যে তাঁর স্ট্যালিন সরকারের সমালোচনা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল করছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, রাহুল গান্ধী এবং স্ট্যালিনের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। ফলে ডিএমকে-কংগ্রেসের জোট ভাঙা কঠিন। তবে কংগ্রেস আসনরফায় নিজেদের দর খানিকটা বাড়িয়ে নিতে চাইছে।
