বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: রুজিরুটির টানে পাড়ি দিয়েছিলেন আফগান ভূমে। কর্মজীবনের শুরুটা ভাল হলেও শেষের স্মৃতি সুখকর হল না। বোমা, গুলি, বারুদের মুখ থেকে কোনওরকমে প্রাণ হাত করে নদিয়ায় (Nadia) ফিরলেন ২ যুবক। শেষ কয়েকদিনের স্মৃতি যেন তাড়া করছে তাঁদের। টিভির পর্দায় চেনা জায়গার অচেনা ছবি দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠছেন তাঁরা।
নদিয়ার রানাঘাটের (Ranaghat) বেগোপাড়ার বাসিন্দা সুপ্রিয় মিত্র ও শানু গঞ্জালভেশ। ২০১৯ সালে ৬ জানুয়ারি আফগানিস্তানে (Afghanistan) পাড়ি দেন রানাঘাটের বাসিন্দা সুপ্রিয় মিত্র। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সেখানে যান শানু গঞ্জালভেশ। দু’জনই আফগানিস্তানের মার্কিন দূতাবাসে শেফের কাজ করতেন। বাড়ি ছেড়ে ভিনদেশে ভালই কাটছিল দিন। অবসরে সহকর্মীদের নিয়েই মেতে থাকতেন সুপ্রিয়, শানু। ওই যুবকেরা জানিয়েছেন, কয়েকমাস আগেই তাঁরা বুঝতে পারছিলেন চেনা এলাকা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। এক এক করে আফগানিস্তানের গ্রাম দখল করছে তালিবানরা। প্রকাশ্যে আসছে বর্বরতার ঘটনা।
[আরও পড়ুন: ‘কালো বলে শৈশবে অবহেলিত হন রবীন্দ্রনাথ!’, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক]
সুপ্রিয় ও শানুর কথায়, “বেশ কয়েকমাস ধরেই খবর পাচ্ছিলাম তালিবানরা বিভিন্ন এলাকা দখল করছে। গ্রেনেড হামলা চলছিল। নির্বিচারে গুলি চলছিল। ইদের দিন চোখের সামনে গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল ২-৩ জন।” সেই সময়ই ওই দুই যুবক বুঝেছিলেন ওই দেশ আর নিরাপদ নয়। এরপরই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ২৮ জুলাই আফগানিস্তান ছেড়ে বাড়ি ফেরেন সুপ্রিয়। তারপরও কয়েকটা দিন সেখানেই ছিলেন শানু। ৪ঠা আগস্ট ফিরেছেন তিনি। তবে তখনও তালিবান প্রবেশ করেনি কাবুলে। তারা বাড়ি ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই কার্যত গোটা আফগানিস্তান দখল করে ফেলেছে তালিবানরা। প্রাণ বাঁচাতে অসহায়ভাবে বিমানে উঠে দেশ ছাড়তে চাইছেন সকলেই, এই সংবাদে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না সুপ্রিয়-শানু। নিজেদের চেনা শহরকে অচেনা হতে দেখে, মানুষের অসহায়তা দেখে আঁতকে উঠছেন।
জানা গিয়েছেন, সুপ্রিয়রা ফিরলেও এখনও তাঁদের পরিচিত অনেকেই আফগানিস্তানে আটকে। কীভাবে ফিরবেন, আদৌ তাঁরা ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়। সুপ্রিয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার অবধি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেও বর্তমানে আফগানিস্তানে আটকে পড়া বন্ধু-সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা। কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের, সে কথা ভেবেই ঘুম উড়েছে সু্প্রিয়-শানুর।