নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দেড় বছর ধরে তিহার জেলে বন্দি। কিন্তু ওইটুকুই। বীরভূমের রাজনৈতিক মহলে এখনও দিব্যি উজ্জ্বল উপস্থিতি অনুব্রত মণ্ডলের! চব্বিশের লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Election) আগে সেই ছবিটা যেন আরও বেশি করে টের পাওয়া যাচ্ছে। ভোট প্রস্তুতিতে সেই ‘অনুব্রত ফর্মুলা’য় কাজ করছেন দলের তৃণমূল স্তরের কর্মী, সমর্থকরা। দুবরাজপুরের হেতমপুরে বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে দেওয়াল লিখনে দেখা গেল – ‘তিহার থেকে খেলা হবে।’ ফলে বারতা একেবারে জলের মতো স্পষ্ট।
গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের (CBI) হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দিল্লির তিহার জেলে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। নানা দুর্নীতি মামলায় বাংলার শাসকদলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী জেলবন্দি হওয়ার পরই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে দল। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল অনুব্রত। তাঁকে জেলা সভাপতি পদেই বহাল রেখেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাঁর অনুপস্থিতিতে বীরভূমের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার জন্য ৫ সদস্যের কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘আপনি শক্তিস্বরূপা’, লাগাতার বিক্ষোভের মাঝেই সন্দেশখালির রেখাকে ফোন খোদ মোদির]
কিন্তু অনুব্রত যেন না থেকেও পুরোদমে রয়েছেন ভোটযুদ্ধে। মঙ্গলবারের সকালে দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুরে বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে দলের সমর্থক, বলা ভালো, অনুব্রত অনুগামীরা লিখলেন, ‘তিহারে বসেই খেলা হবে’। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এলাকায়। স্বভাবতই অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব ফের সামনে এসেছে। একইসঙ্গে ভোট পরিচালনায় এখনও যে অনুব্রত জেল থেকে সক্রিয়, সেই অভিযোগ তুলল বিজেপি। সোমবার দোল উৎসবে দেখা গিয়েছিল, সিউড়িতে অনুব্রতর কাটআউটে তাঁর পায়ে আবির দিয়ে তবেই রং খেলা শুরু করেছেন অনুগামীরা। সেই তালিকায় ছিলেন শহরের কাউন্সিলররা। আর আজ ‘তিহার থেকে খেলা হবে’ দেওয়াল লিখন।
[আরও পড়ুন: দিলীপের ‘কুমন্তব্য’ নিয়ে জেলাশাসকের রিপোর্ট চাইল কমিশন, তৃণমূলের অভিযোগেই ব্যবস্থা]
এনিয়ে বিতর্কে বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় বলেন, ‘‘দেওয়াল লিখন ব্যাপারটাই বুথের কর্মীদের উপর নির্ভর করে। বীরভূমে বহু নেতাই নেতা হয়েছেন অনুব্রতর জন্য। সে জন্য কোনও কর্মী যদি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকেন, সেই বোধ থেকে কেউ যদি দেওয়াল লেখে, তাতে কোনও অপরাধ নেই। আর খেলা হবে তো তৃণমূলের স্লোগান।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় অনুব্রতকে ‘ভোট ভগবানে’র সঙ্গে তুলনা করে বলছেন, ‘‘আবেগ তো ব্যাকরণ মেনে চলে না। ভগবান যেমন অন্তরাল থেকে আশীর্বাদ করেন, প্রেরণা দেন, নির্দেশ দেন, সেভাবেই কর্মীরা তাঁকে সামনে রেখেই ভোটে লড়তে ‘খেলা হবে’ নিয়ে এগোতে চাইছেন।’’
অন্যদিকে দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহার প্রতিক্রিয়া বলেছেন, ‘‘গরু পাচার চক্রে তিহারে গিয়েও লজ্জা নেই। জেলা কেন, গোটা বাংলাকেই পিছিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের এই নেতারা। ভোটের আগে তারাই দলের কাণ্ডারি।’’ মোট কথা, অনুব্রতর সাজানো সংগঠনেই তাঁরই ফর্মুলায় এবারও ভোট করবেন কর্মীরা, তা বুঝিয়েই দিলেন।
দেখুন ভিডিও: