সুমিত বিশ্বাস: লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election 2024) ঘোষণার পর ৪৮ ঘন্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু তার পরও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা থেকে লোকসভা নির্বাচনে ডিউটির কাজে যুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ বিভিন্ন মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi), প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ছবি। কেন্দ্রীয় সরকারের ওইসব ওয়েবসাইট খুললে দেখা যাচ্ছে হাসিমুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah)ছবিও।
শুধু রাজনৈতিক দলের পতাকা, ফেস্টুন, ফ্লেক্স, হোর্ডিং সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরানোই নয়। সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেও সরিয়ে দিতে হবে বিদায়ী মন্ত্রীদের ছবি। এ সবই নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি আওতায় পড়ে। শনিবার বিকালে ভোট ঘোষণার পর দেশজুড়ে চালু হয়ে গিয়েছে এই আদৰ্শ আচরণবিধি (Model Code of Conduct)। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের বিদায়ী মন্ত্রীদের ছবি সেখানে থেকে যাওয়ায় সমগ্র দেশ জুড়ে ভোটাররা প্রভাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। তৈরি হয়েছে বিতর্কও। কারণ এসব ওয়েবসাইট যে কোনও সাধারণ মানুষই নিজেদের ডেক্সটপ, ল্যাপটপ বা মোবাইল থেকে কোনও কাজে বা সাধারণভাবে খুলতেই পারেন। আর সেখানে ভোট ঘোষণার পরেও বিদায়ী মন্ত্রীদের ছবি ভেসে আসা রীতিমত নির্বাচনী বিধিভঙ্গ!
[আরও পডুন: আইফোন অর্ডার করে হেনস্তার শিকার! ক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে Flipkart]
তাহলে প্রশ্ন এই ধরনের ওয়েবসাইটের (Website) বিষয়ে ভোটাররা কিভাবে কোথায় অভিযোগ জানাবেন? জেলায় জেলায় নির্বাচনী আধিকারিকদের কথায়, “সেই ভোটার তার জেলায় অভিযোগ জানালে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের চিফ ইলেক্টোরাল অফিসারকে অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিধি অনুযায়ী তা যাবে ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে। এরপর বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে।” এ বিষয়ে রাজ্যের চিফ ইলেক্টোরাল অফিসার আরিজ আফতাবের প্রতিক্রিয়া নিতে তাঁর কার্যালয়ের ল্যান্ড লাইনে ফোন করা হয়। কিন্তু কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর ওয়েবসাইট cbi.gov.in খুললে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি। সেই ছবির তলায় উদ্ধৃতি দিয়ে তিন লাইন কথা। কথা শেষে নিচে লেখা ‘শ্রী নরেন্দ্র মোদী, অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া।’ একইভাবে তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির ওয়েবসাইট nia.gov.in টাইপ করলে সেখানেও ভেসে আসছে বুকের কাছে হাতের উপর হাত রাখা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও একই কায়দায় হাসি মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই ওয়েবসাইটের নিচে লেখা আছে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস সবকা প্রয়াস।’
[আরও পড়ুন: একা বিজেপিই ৭,০০০ কোটি! সব বিরোধী মিলিয়ে ৬২০০ কোটি, প্রকাশ্যে নির্বাচনী বন্ডের আয়]
এ তো গেল তদন্তকারী সংস্থার (Central Agencies) ওয়েবসাইট। আর যারা এই নির্বাচনের কাজে ভোট ডিউটিতে সরাসরি যুক্ত সেই কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ (CRPF), আইটিবিপি, সিআইএসএফের ওয়েবসাইটেও সেই একই ছবি। Crpf.gov.in ওয়েবসাইটে ডানদিকে একপাশে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ছবি। তার পাশে হিন্দিতে লেখা ‘শ্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’। একইভাবে ‘শ্রী অমিত শাহ ভারত কে গৃহমন্ত্রী’। ইন্দো-তিব্বতিয়ান বর্ডার পুলিশের ওয়েবসাইট itbpolice.nic.in- এও সেই মোদি-অমিত শাহ। এমনকী প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের mod.gov.in ওয়েবসাইটেও পাশাপাশি রাজনাথ সিং ও অজয় ভট্টর ছবি। নির্বাচন ঘোষণার পর একদিন পার হয়ে গেলেও সেই সমস্ত ছবি সরানো হয়নি। ওই দুই মন্ত্রীর ছবির নিচে লেখা ‘অনারেবল রক্ষা মন্ত্রী’ শ্রী রাজনাথ সিং’ ও ‘অনারেবল রক্ষা রাজ্য মন্ত্রী শ্রী অজয় ভট্ট।’
শেষ নয় এখানেও। বিদেশ মন্ত্রকের mea.gov.in ওয়েবসাইটেও দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের এমন নির্বাচনী বিধিভঙ্গ কার্যত নজিরবিহীন, বলছেন সাধারণ ভোটাররাই।