সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের পরমাণু ক্ষেত্রকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। বিদেশি বিনিয়োগের হাত ধরে পরমাণু প্রযুক্তিতে বাকিদের টেক্কা দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি। গত সোমবার লোকসভায় সাস্টেনেবল হারনেসিং অফ অ্যাডভান্সমেন্ট অফ নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া ২০২৫ বিল আনে সরকার। জানা গিয়েছে এই বিলে সম্মতি দিয়েছে সংসদ। কিন্তু, এই বিল নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরে গেলে কী হবে এই ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ? কী হবে যদি হয় কোনও দুর্ঘটনা? দায়বদ্ধ থাকবে কে? বিরোধীদের প্রশ্ন, চেরনোবিলের ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেয়নি মোদি সরকার।
বিরোধী দলের ওয়াকআউটের মধ্যেই ধ্বনিভোটে পাস হয়েছে এই বিল। এর মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ভারতের অসামরিক পারমাণবিক ক্ষেত্রকে বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য খুলে দিল সরকার এমনটাই দাবি বিরোধীদের। এই বিল পাশ হলে যে দুটি অন্য বিল বাতিল হবে তাতে এই ক্ষেত্রের উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। পাশাপাশি, বেসরকারি সংস্থগুলিও বিভিন্ন কঠিন নিয়মের বেড়াজাল পেরিয়ে তুলনামূলক কম সামাজিক দায়িত্ব পালন করেই এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেক্ষেত্রে, পরমাণু শক্তি তৈরির জন্য রিয়াক্টর-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো তৈইরতে নজরদারি থাকবে না সরকারের। এর ফলে খারাপ সরঞ্জাব ব্যবহার এবং এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
সংসদের দুই কক্ষে অনুমোদন পেলে ১৯৬২ সালের অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাক্ট বাতিল হয়ে যাবে। পাশপাশি, বাতিল হবে নিউক্লিয়ার ড্যামেজ অ্যাক্ট ২০১০। এই দুই আইনকেই পরমাণু ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের মূল সমস্যা বলে মনে করা হত। নতুন এই বিলটি আইন হলে, এটি একটি পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করবে। এই সংস্থা সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে। এর ফলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার উপর ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশনের একচেটিয়া অধিকার বাতিল হবে।
'শান্তি বিলে'র প্রস্তাবিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল ভারতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চুল্লি নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হবে। এগুলি এখনও পর্যন্ত নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCIL) এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই আইন পারমাণবিক দুর্ঘটনার জন্য প্ল্যান্ট অপারেটরদের উপরেই দায়বদ্ধতা সীমিত করে। পাশাপাশি, সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে বিলে। বিলটি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে প্রতিটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ বেধে দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলগুলি এই বিলের বিরোধীতায় লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে। তাঁদের যুক্তি, এই বিল পারমাণবিক ক্ষতির জন্য নাগরিক দায়বদ্ধতা আইন, ২০১০ এর নিয়মগুলিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এর ফলে পারমাণবিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের উপর পারমাণবিক ঘটনার দায় চাপানো যাবে না। বিরোধী দলের সাংসদরা বিলটির সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, বিলটি 'স্থায়ী কমিটির' কাছে পাঠানো উচিত।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকারের বিরধীতা করে বিজেপি। বিজেপির দাবি ছিল, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পারমাণবিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের উপর কঠোর দায়বদ্ধতা চাপানোর সুযোগ রাখেনি সরকার। বিজেপি-র দাবি ছিল সরকারকে 'বিক্রি' করছে কংগ্রেস। বিরোধীরা ১৯৮৪ সালের ইউনিয়ন কার্বাইড গ্যাস লিকের সঙ্গে এর সঙ্গেও তুলনা করে। যদিও, এই নতুন বিলে একই কাজ তাঁরা নিজেরা করছে বলে অভিযোগ বর্তমান বিরোধীদের। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার চেরনোবিলের দুর্ঘটনার সময়ও বারবার করে সামনে আসে খারাপ যন্ত্রাংশের কথা। যদিও, সরকারের চাপে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সেই কথা অস্বীকার করেন বিজ্ঞানিরা।
