গৌতম ব্রহ্ম: ১৩০ কোটির দেশে এ যাবৎ মাত্র একজন শিশুই শিকার হয়েছে এই রোগের। ‘অ্যাকোয়ার্ড প্লেটলেট ডিসফাংশন ইউথ ইওসিনোফিলিয়া’। এবার বাংলাতেও দেখা মিলল সেই অতিবিরল রোগের। তাও একজন নয়, তিন-তিনটি শিশু প্রায় একই সঙ্গে আক্রান্ত। এই রোগের ছোবলে রক্তে মজুত প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার কর্মক্ষমতা কমে যায়। অর্থাৎ রক্ত তঞ্চনের কাজ ব্যাহত হয়। জোরে আঘাত লাগলে শরীরে যেমন কালশিটে পড়ে তেমনই দাগ হয় শরীরজুড়ে, কোনও আঘাত ছাড়াই।
সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের নিশ্চিন্তপুরের সাত বছরের এক শিশুর শরীরে দেখা মিলেছে এই রক্তঘটিত রোগের। কলকাতা শহরের এক কর্পোরেট হাসপাতাল সম্প্রতি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই রোগের অস্তিত্বের কথা মেনে নিয়েছে। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানায় শিশুটির চিকিৎসক ডা. নিশান্তদেব ঘটককে, যিনি অতিবিরল হওয়া সত্ত্বেও রোগটি নির্ণয় করেছেন। চিন্তার বিষয় হল, এই শিশুটি একা নয়। একই রকম উপসর্গ ধরা পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের আরও দু’টি শিশুর শরীরে। এবারও নির্ণায়ক সেই নিশান্তদেব। ডাক্তারবাবু জানালেন, ‘‘এ যাবৎ শিশুদের ক্ষেত্রে একটি মাত্র কেস ভারতে ধরা পড়েছে। এতটাই বিরল এই রোগ। কিন্তু অদ্ভূত বিষয় হল, আমার কাছেই এই রোগের উপসর্গ নিয়ে এসেছে তিন শিশু।’’
[আরও পড়ুন: ভারতের বিরাট কূটনৈতিক জয়, মুক্তি পেলেন কাতারে বন্দি ৮ প্রাক্তন নৌসেনা কর্তা]
এই রোগের পরীক্ষা শুধুমাত্র কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে হয়। একজন চিকিৎসকই করেন। তাই নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য তিন শিশুরই রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছিল পার্কস্ট্রিটের সেই ল্যাবরেটরিতে। বাইপাসের একটি হাসপাতালে ১৫ জানুয়ারি নিশ্চিন্তপুরের শিশুটিকে পরীক্ষা করেন হেমাটোলজিস্ট ডা. রজত ভট্টাচার্য। রজতবাবু দীর্ঘদিন ব্রিটেনে ও সিঙ্গাপুরে কাটিয়েছেন। এই ‘অ্যাকোয়ার্ড প্লেটলেট ডিসফাংশন ইউথ ইওসিনোফিলিয়া’ রোগটি মালয়েশিয়া, তাইওয়ানের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে প্রায়ই দেখা যায়। এই রোগ নিয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে রজতবাবূুর। তঁার কাছে শিশুটিকে পাঠনো হয়েছিল। জানালেন নিশান্তদেব। বললেন, ‘‘কম সময়ের ব্যবধানে তিনটি শিশুর শরীরে দেখা মিলেছে এই রোগের, তাই নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি।’’ চিকিৎসকদের আশঙ্কা, হয়তো এ রাজ্যে আরও অনেকে ভুগছে এই রোগে। অভিজ্ঞতা না থাকায় ডাক্তারবাবুরা তা ধরতে পারছেন না। পেপার প্রকাশিত হলে এই নিয়ে সম্যক ধারনা হবে।
[আরও পড়ুন: ইন্টারভিউ ছেড়ে চলে যান মমতা, এক যুগ পর রাজ্যসভার ভোটে TMC প্রার্থী সেই সাগরিকা, কেন?]
কেন এই রোগ হয়, তা জানা যায়নি। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ডাক্তারবাবুদের অনুমান, এই রোগের উৎস কৃমি। কৃমি থেকে নিঃসৃত কোনও রাসায়নিক সম্ভবত প্লেটলেটের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই অতিবিরল হলেও এই রোগের চিকিৎসা সহজ। দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কৃমির ওষুধ খেলেই অসুখ সেরে যায়। সম্পূর্ণ সুস্থ হয় শিশু। তবে সময়ে ধরা না পড়লে বিপদ হতেই পারে।