সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঢাকা (Dhaka) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ (Humayun Azad) হত্যা মামলায় ৪ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিল আদালত। ১৮ বছর আগে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাংলা অ্যাকাডেমির উলটো দিকের ফুটপাথে তাঁকে হামলার অভিযোগ ওঠে চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। অবশেষে সেই মামলায় রায় দিল আদালত। অভিযুক্ত ৪ জনই জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। তাদের নাম মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহিন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে শামিম।
উল্লেখ্য়, তাঁর লেখার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি পেতেন হুমায়ুন। ২০০৪ সালে অমর একুশে বইমেলায় হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রকাশিত হয়। যা নজরে পড়ে জেএমবি শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের। ওই দুই জঙ্গি নেতার নির্দেশেই আক্রান্ত হন হুমায়ুন আজাদ। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশের মেলা থেকে ফিরছিলেন তিনি। সেই সময়ই তাঁর উপরে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে জখম করা হয়। কয়েক মাস চিকিৎসার পর আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ওই বছর ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
[আরও পড়ুন: বাদ যেতে পারে অণ্ডকোষ, হাঁটতেও সমস্যা হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলের, চিন্তায় চিকিৎসকরা]
২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। এই মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে একজন বেঁচে নেই। তার নাম হাফিজ মাহমুদ। বাবার খুনের বিচার চেয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেন হুমায়ুন আজাদের মেয়ে মৌলি আজাদ। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন প্রথাবিরোধী লেখক। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি কোনও দলাদলিতে ছিলেন না। সমাজের বাস্তবতা নিয়ে তিনি নিজে যা বুঝতেন, তাই প্রকাশ করতেন। এ দেশের ধর্মীয় উগ্রবাদী-মৌলবাদীদের দৈনন্দিন ও পূর্বাপর কীর্তিকলাপ নিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে লিখতেন, প্রচার ও প্রকাশনা করতেন।’ বাবার বিভিন্ন উপন্যাস ও প্রবন্ধ নিয়ে মৌলি আজাদ বলেন, ‘আগে তাঁর (হুমায়ুন আজাদ) সাড়াজাগানো গবেষণাগ্রন্থ ‘নারী’ প্রকাশিত হলে সরকার তা বাজেয়াপ্ত করে। পরে হাইকোর্ট নারী প্রকাশনার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় দেন। পরে তিনি আরও উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন, যা মৌলবাদীরা না পড়ে বিরোধিতা করতেন।’
প্রসঙ্গত, এই হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ‘আগামী প্রকাশনী’র প্রকাশক ওসমান গনি এবং ‘দৈনিক জনতা’র চিত্র সাংবাদিক ইফতেখার উদ্দিন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে এখনও পলাতক সালেহিন ও শামিম।