সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারুদের পোড়া গন্ধে ভারী বাতাস। চারদিকে স্বজনহারা কান্না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। খাদ্যের জন্য হাহাকার। সব দিকেই ধবংসের ছবি স্পষ্ট। গত ১০ মাস ধরে গাজার এই করুণ অবস্থাই দেখছে গোটা দুনিয়া। হামাস নিধনে ইজরায়েলের অভিযানে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে গোটা গাজা ভূখণ্ড। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ কৃষিজমি। যার জেরে তীব্র হয়েছে খাদ্য সংকট। সম্প্রতি এমনই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।
দক্ষিণ গাজার শহর আল মাওয়াসি। সেখানে মূলত কৃষিকাজ করেই দিন কাটান বহু মানুষ। কিন্তু গাজায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হওয়ার পর বদলে গিয়েছে সব কিছু। একদিন নিজের খেতেই কাজ করছিলেন নেদাল আবু জাঝার। হঠাৎই সেখানে চলে আসে ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক। শুরু হয় হামলা। মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে যায় গোটা জমি। কোনওরকমে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান নেদাল। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ক্লান্ত গলায় নেদাল জানান, "এই হল ধ্বংসের নমুনা। আমরা সাধারণ কৃষক। হঠাৎ একদিন ট্যাঙ্ক এসে গোলাবর্ষণ শুরু করল। ইজরায়েল কিন্তু এই এলাকাটিকে হিউম্যানিটারিয়ান জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।"
[আরও পড়ুন: ‘ওরা তো ঈর্ষান্বিত’, মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়াকে খোঁচা ক্রেমলিনের]
নাদেল একা নন। এই পরিস্থিতির শিকার গাজার বহু কৃষক। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। সেই থেকে জুন মাস পর্যন্ত গাজা জুড়ে প্রায় ৫৭ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। গত মাসের শেষে এই তথ্য জানায় রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশএ। এনিয়ে এফএও-এর ম্যাটিউ হেনরি জানিয়েছেন, প্যালেস্তিনীয়দের ভূখণ্ডের ৩০ শতাংশ অন্নসংস্থান হয় কৃষিক্ষেত্র থেকে। সেগুলোই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
বলে রাখা ভালো, ২০২২ সালেও গাজা প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার কৃষিপণ্য রফতানি করেছে ইজরায়েল। তার মধ্যে স্ট্রবেরি ও ট্যোমাটো অন্যতম। গত বছরের অক্টোবরে সংঘর্ষ শুরু হতেই সেই রফতানির পরিমাণ কমে শূন্য হয়ে গিয়েছে। এখন কৃষিজমিতেও চলছে 'অগ্নিবর্ষণ'। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, গাজায় যে খাদ্যের হাহাকার চলছে তার পিছনে এই ধ্বংসলীলা প্রবল ভাবে দায়ী।
এদিকে, ইজরায়েলের অভিযানের ফলে গাজায় তীব্র হয়েছে ওষুধের সংকটও। যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। গাজায় জারি রয়েছে মৃত্যুমিছিল। মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছে ৩৮ হাজার। হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে মৃতদেহে। আহতের সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে সবকিছু সামাল দিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে। এর মাঝেই এপ্রিল মাস থেকে দেখা দিয়েছে ওষুধের আকাল।