সুকুমার সরকার, ঢাকা: মোটা টাকা আয় করে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে হবে। বিদেশে গেলেই নাকি লাখ লাখ টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। তাই ভাগ্য বদল করতে প্রতিবছর বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণী আমেরিকা, ইউরোপের মতো দেশগুলোতে পাড়ি দেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ভূমধ্যসাগরে হয়ে ওইসব দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর তা করতে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান অনেকে। এবারও ঘটল তেমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা। ভালো দিনের আশায় বিদেশে যেতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু হল ৮ বাংলাদেশির!
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নৌকাডুবি হয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারান বাংলাদেশের নাগরিকরা। কিন্তু এবার অন্য ধরণের দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ওই ৮ যুবকের। জানা গিয়েছে, জলপথে যাওয়ার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি এড়াতে ওই যুবকদের নৌকার পাটাতনের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল দালালরা। সেখানে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় সকলের। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ছেলেকে হারিয়েছেন দক্ষিণের পদ্মাপাড়ের জেলা মাদারীপুরের উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের হাফিজা বেগম। শুক্রবার কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, "আমার ছেলের চোখে কত স্বপ্ন ছিল। সব কিছু শেষ হয়ে গেল। আজ ছেলের মরদেহ দেখতে হচ্ছে। হায়রে কপাল আমার!"
[আরও পড়ুন: শত চেষ্টাতেও মিলছে না ইলিশ, মন খারাপ বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের]
এই ঘটনায় মৃত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। বাকি তিনজন গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় থাকতেন। মৃতরা হলেন, মাদারীপুরের কোদালিয়া গ্রামের সজীব কাজী (১৯), স্বরমঙ্গলের মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়ার নয়ন বিশ্বাস (২৪), কেশরদিয়ার কাওসার (২২), বড়দিয়ার রিফাদ (২১), ফতেয়পট্টির রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দির আপন (২২)। মৃতদের আত্মীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌদির এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের মরদেহগুলো পৌঁছায়। ময়নাতদন্তের জন্য সেগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। শুক্রবার দেহগুলো ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইটালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। প্রথমে তাঁরা দুবাই হয়ে উড়োজাহাজে করে লিবিয়া পৌঁছন। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইটালির উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। মাঝপথে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ এড়াতে তাঁদের জোর করে পাটাতনে লুকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে তাঁরা প্রাণ হারান।
[আরও পড়ুন: ভোট পর্যবেক্ষণে বিজেপির আমন্ত্রণে ভারতে আওয়ামি লিগের প্রতিনিধি দল]
এছাড়া এই ঘটনায় এক পাকিস্তানি নাগরিকও মারা যান। খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। নিহতদের পরিবার গতকাল ঢাকার বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ৩০ জন যেতে পারবেন এমন একটি ছোট নৌকায় ৫২ জনকে নিয়েছিল দালালেরা। অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্র প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন। ঘটনার পর থেকেই দালাল চক্রের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে।