অর্ণব আইচ: ঠিক যেন সিনেমার মতো। বিকাল বেলা সুস্থ সন্তান বাড়ি থেকে খেলতে বেরল। কিন্তু সন্ধে গড়িয়ে রাত হলেও বাড়ি ফিরল না সে। উদ্বিগ্ন মায়ের মোবাইলে অজানা নম্বর থেকে আসে আচমকাই একটি হুমকি ফোন। উলটোদিক থেকে ভেসে এল অপরিচিত কণ্ঠ। দাবি একটাই দিতে হবে ১০ লক্ষ টাকা। বিনিময়ে ফিরে পাওয়া যাবে একমাত্র সন্তানকে। আর টাকা দিতে না পারলে মিলবে সন্তানের নিথর দেহ। তবে এই টানটান চিত্রনাট্যের মতো সাজানো ঘটনার রহস্য বেশিক্ষণ জিইয়ে রাখতে পারল না শিশুর অপহরণকারীরা। পরিবর্তে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার কিনারা করে ফেলল পুলিশ। উদ্ধার হল সন্তান। পুলিশের জালে ধরা পড়ল অভিযুক্তরাও।
তপসিয়া (Tapsia) রোডের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বাস ছোট্ট মহম্মদ কামরানের। বাবা কর্মসূত্রে থাকেন সৌদি আরবে। তাই একা কাঁধে সন্তানকে সামলে রাখার দায়িত্ব সেই কবেই তুলে নিয়েছেন কামরানের মা। তিনি প্রায় সবসময়ই সন্তানকে নজরে নজরে রাখেন। অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার বিকেলে কামরান বাড়ির কাছেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল। খেলা শেষে তার বন্ধুবান্ধবরা সময়মতো বাড়িও ফিরে যায়। তবে সন্ধে বাড়লেও বাড়ি ফেরেনি ওই খুদে। মায়ের দুশ্চিন্তার পারদ চড়তে থাকে। অন্ধকারের মধ্যেই শুরু হয় খোঁজখবর। ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজলেও কামরান বাড়ি ফেরে না। কোথায় গেল কামরান? সে বিষয়ে তার বন্ধুবান্ধবরাও যথোপযুক্ত উত্তর দিতে পারেনি। আচমকাই এমন সময়ে বেজে উঠল কামরানের মায়ের ফোন। অজ্ঞাতপরিচয় কোনও ব্যক্তি সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ১০ লক্ষা টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বসে।
[আরও পড়ুন: সৎ বাবার যৌন লালসায় অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী, অভিযুক্তকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে মার প্রতিবেশীদের]
ওই ফোন পাওয়ার পর আর সময় নষ্ট করেননি কামরানের মা। সোজা তিলজলা থানায় যান তিনি। নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ফোনে মুক্তিপণ দাবি করার বিষয়টিও জানান। যে অজানা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল সেটির সঙ্গে সঙ্গে টাওয়ার লোকেশন খুঁজে বের করার কাজ শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, বেহালার আশপাশ থেকেই ফোনটি আসছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার ফোনও আসে। মুক্তিপণের দাবিও জানায় অপহরণকারী। কামরান যেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় গভীর রাতে ওই এলাকাতেও হানা দেয় পুলিশ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। তাতেই জানতে পারা যায় শেষবার কামরানকে তার মামা মহম্মদ ইমরানের সঙ্গে দেখা গিয়েছে।
এরপর পুলিশ শিশুর মামাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। প্রথমে কিছু জানে না বলেই ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। যদিও লাগাতার পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে। জানায় ভাগ্নেকে অপহরণের মাস্টারমাইন্ড সে নিজেই। শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের দায়িত্ব বিহারের ছাপরার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ এবং রঞ্জিৎ নামে দু’জনকে দিয়েছিল বলেও জানায় ইমরান। এরপর জানা যায় শিশুটিকে বেহালার পর্ণশ্রীর এক গেস্ট হাউসে রাখা রয়েছে। সেখানেও হানা দেয় পুলিশ। শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। অপহৃত শিশুর মামাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের জালে ধরা পড়েছে বিশ্বজিৎ ও রঞ্জিতও। এদিকে, সন্তানকে ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁর মা।
[আরও পড়ুন: সুস্থতার রেকর্ড গড়েছে বাংলা, এবার মৃত্যু কমানোই লক্ষ্য রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের]
The post মামার মদতে তপসিয়ায় শিশুকে অপহরণ, ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি appeared first on Sangbad Pratidin.