দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: দাদার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের খরচ জোগাতে ঝিলার জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে সুন্দরবনের (Sundarban) মৎস্যজীবী। ঘটনার পর দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও হদিশ মেলেনি তাঁর। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর নাম দীনবন্ধু মণ্ডল(৫১)। একথা শুনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই মৎস্যজীবীর শ্যালক।
১০ জুলাই সুন্দরবনের পঞ্চমুখানি জঙ্গল লাগোয়া কাপূরা নদীখাড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে উধাও হয়ে যান সবিতা সরদার (৪৫)নামে এক মহিলা মৎস্যজীবী। ১৩ জুলাই সুন্দরবনের ঝিলা জঙ্গল সংলগ্ন কাঁকসা খালে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান ধরণী মণ্ডল। দুটি ক্ষেত্রে বনদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। তবে দীনবন্ধু মণ্ডল বনদপ্তরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, চারদিন আগে দরিদ্র ওই মৎস্যজীবীর বড় দাদা পঞ্চানন মণ্ডল মারা গিয়েছেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাই দাদার পারলৌকিক ক্রিয়ার খরচ জোগাড় করতে বনদপ্তর থেকে বৈধ অনুমতি নিয়ে তিন সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল বিপিন।
[আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুর্শিদাবাদে চায়ের দোকানে ধাক্কা ডাম্পারের, ঘটনাস্থলেই মৃত ৪]
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুন্দরবনের ৫ নম্বর ঝিলা জঙ্গলে কাঁকড়া ধরার জন্য ডিঙি নৌকো নোঙর করেছিলেন জঙ্গল ঘেঁষা নদীর তীরে। কোনও কিছু বোঝার আগেই নৌকোর উপরে থাকা দীনবন্ধুকে টার্গেট করে ঝাঁপিয়ে পড়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ওই মৎস্যজীবীর ঘাড়ে থাবা বসিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সঙ্গীরা বাঘের মুখ থেকে দীনবন্ধুকে উদ্ধার করার জন্য নৌকোর বৈঠা আর কাঁকড়া ধরার শিক নিয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে। দীর্ঘপ্রায় মিনিট চল্লিশ রুদ্ধঃশ্বাস লড়াই চলে। অবশেষে রয়্যাল বেঙ্গলের ভয়ংকর মূর্তির সামনে নিরুপায় হয়ে রণে ভঙ্গ দেয় তিন মৎস্যজীবী। বাঘ তার শিকারকে নিয়ে গা ঢাকা দেয় জঙ্গলে। তিন সঙ্গী নৌকো নিয়ে ফিরে আসেন ২ নম্বর এমলিবাড়ি গ্রামের ঘাটে। এই খবর পেয়েই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওই মৎস্যজীবীর শ্যালক। শোকের ছায়া এলাকায়।