অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: শারীরিক সম্পর্কের কথা সকলকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে লাগাতার টাকা আদায়ের চেষ্টা। মানসিক চাপ সইতে না পেরেই হাওড়ার (Howrah) মালিপাঁচঘড়ায় আত্মহত্যা যুবকের। মৃত্যর ২ দিন পর প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে মৃতের প্রেমিকাকে।
ব্যাপারটা ঠিক কী? শুক্রবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বাড়ির ছাদে বিকট শব্দ পান হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ার বাসিন্দা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক যুবক। সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করেন অঞ্জনবাবু। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালে রক্তাক্ত যুবককে নিয়ে যান তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, ওই যুবক কে, কেনই বা ৬১ নম্বর বাজাল পাড়া লেনে অঞ্জনবাবুর দোতলা বাড়ির ছাদে পড়লেন।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে চোরাই পথে কলকাতায় ঢুকছে সোনা! উদ্ধার বরানগরের দোকান থেকে]
ঘটনার তদন্তে নামতেই পুলিশের সামনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম আকাশ দাস। বয়স ২৪ বছর। দৌলতদেবী গুপ্তা নামে ৪৬ বছর বয়সী এক মহিলার সঙ্গে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল আকাশের। অভিযোগ, হঠাৎই টাকার জন্য প্রেমিককে হুমকি দিতে শুরু করে মহিলা। টাকা না পেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়। সেই চাপের কারণেই অঞ্জনবাবুর বাড়ি লাগোয়া একটি পাঁচতলা ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে ঝাঁপ দেন আকাশ। রবিবার অঞ্জনবাবু মালিপাঁচঘড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতেই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে দৌলত দেবী গুপ্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিন তাঁকে হাওড়া আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু কীভাবে ঘটল এই গোটা ঘটনা? পুলিশ জানিয়েছে, আকাশ দাস নামে ওই যুবক পেশায় রঙের মিস্ত্রি। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে। সালকিয়ার সংঘশ্রী ক্লাবের কাছে একটি বাড়িতে বেশকিছুদিন দেওয়াল রঙের কাজ করছিল সে। এছাড়াও সালকিয়াতে আগেও অনেক কাজ করেছে মৃত আকাশ। কাজের সূত্রেই রসিক কৃষ্ণ ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা দৌলত দেবী গুপ্তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আকাশের। দশ দিনের প্রেমেই ১১ ফেব্রুয়ারি বাজাল পাড়ার পাঁচতলা ফ্ল্যাটের ছাদে দৌলতদেবী গুপ্তা ও আকাশের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপরই বিষয়টি ফ্ল্যাট ও আশপাশের বাসিন্দাদের জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আকাশের থেকে টাকা চায় মহিলা। তখনই আতঙ্কে আকাশ পাঁচ তলা ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে পাশের দোতলা বাড়ির ছাদে ঝাঁপ দেয়।
[আরও পড়ুন: রোজ শুনতে হত কটুক্তি! প্রতিবাদ করায় হাওড়ায় বেধড়ক মার বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন কিশোরকে]
কিন্তু এতকিছু ঘটার পরও ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কিছু জানতে পারলেন না কেন? পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা আগে ফ্ল্যাটটিতে রান্নার কাজ করায় সে জানতো রাত ১১টা পর্যন্ত মূল দরজা খোলা থাকে। পাশাপাশা কমন সিঁড়ি দিয়ে কে ঢুকছে বা বেরোচ্ছে তা কেউ খোঁজ রাখেন না। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি নর্থ অনুপম সিং রবিবার জানালেন, “একটি বাড়ির ছাদে অস্বাভাবিকভাবে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তের জন্য মালিপাঁচঘড়া থানার আইসি অমিত কুমার মিত্রের নেতৃত্বে হাওড়া সিটি পুলিশের একটি দল গঠন করা হয়েছিল। যে ব্যক্তির বাড়িতে আকাশ পড়েছিলেন সেখানে একটি ফরেন্সিক দলও পাঠানো হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে যুবকের ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনাটি সামনে আসে। সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতেই রহস্যভেদ করে পুলিশ।