সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘সাগর’ ছবির কথা উঠলে আজও অনেকের মনে পড়ে যায় ডিম্পল কাপাডিয়ার তোয়ালে খসে পড়ার সেই দৃশ্যের কথা। সেসময় কম শোরগোল পড়েনি দৃশ্যটি নিয়ে। কিন্তু আদতে সেটা ছিল নিছক ‘দুর্ঘটনা’। আচমকাই সমুদ্রস্নান সেরে ওঠা ডিম্পলের শরীর থেকে সরে গিয়েছিল তোয়ালের আবরণ। সময় বদলেছে। আজ যদি এমন কিছু হত, তাহলে কী হত? উত্তর দিচ্ছেন আস্থা খান্না (Aastha Khanna), ‘‘আমি থাকলে একই দৃশ্য শ্যুট হত, কিন্তু ডিম্পল ম্যাম অস্বস্তিতে পড়তেন না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হত না তাঁকে।’’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগবে কে এই আস্থা খান্না? কেনই বা তাঁর উপরে ‘আস্থা’ থাকত ডিম্পলের? আসলে এটাই যে পেশা ওই বছর ছাব্বিশের তরুণীর। তিনিই দেশের প্রথম ‘ইন্টিমেসি কোঅর্ডিনেটর’ (Intimacy coordinator)। ছবিতে অন্তরঙ্গ ও যৌন দৃশ্যের (Intimate scene) নির্দেশনার দায়িত্ব তাঁর উপরে। পরিচালক ও অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করাই তাঁর কাজ। সিনেমায় যৌন দৃশ্য শ্যুট করা অ্যাকশন দৃশ্য তোলার মতোই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। অথচ এদেশে অ্যাকশন ডিরেক্টর থাকলেও এই ধরনের দৃশ্যের জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ ছিল না। আস্থার হাত ধরে শুরু হল এক নতুন পেশার। হলিউডে অবশ্য এই পেশাটি রয়েছে। কিন্তু সেই অর্থে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইন্টিমেসি কোঅর্ডিনেটর ছিল না। আস্থাই প্রথম।
[আরও পড়ুন: বরকে মারধর থেকে একমাস ধরে কনের কান্না! বিয়ের এসব আজব প্রথা অবাক করবে আপনাকে]
গত লকডাউনের সময় থেকেই এই কাজ শুরু করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করার সময় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অবগত থাকাটা খুব দরকার। যদি শ্যুটিংয়ের সময় দুর্ঘটনাবশত কিছু উঠেও যায় ক্যামেরায়, তাহলে তা ডিলিট করতে হবে। আবার যদি পরিচালক ও কলাকুশলীরা একমত হন যে, দৃশ্যটিতে নান্দনিকতা রয়েছে, তাহলে তা রেখেও দেওয়া যেতে পারে।’’
সম্প্রতি বলিউড তথা দেশের বিনোদন জগতের অন্যান্য মঞ্চ থেকে বারবার অভিযোগ উঠেছে #metoo। তার মধ্যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের অছিলায় যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। আস্থার কাজই হল তিনি যে ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, সেখানে এই ধরনের দৃশ্যে অভিনেত্রীদের নিরাপত্তা যেন পুরোমাত্রায় বজায় থাকে। সেজন্য দৃশ্যটি নিয়ে পরিচালক ও কুশীলবদের সঙ্গে আলোচনা করা থেকে শ্যুটিংয়ের সময় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাঝে প্রয়োজনীয় ব্যবধান রাখতে সাহায্য করার মতো নানা পদক্ষেপ করতে হয় তাঁকে।
এই মুহূর্তে একাধিক প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত তিনি। তার মধ্যে রয়েছে নেটফ্লিক্সের মতো সংস্থাও। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আস্থাদের মতো পেশাদারদের হাত ধরে হয়তো নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। ভবিষ্যতে আর ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অহেতুক টেনশন আর কুণ্ঠায় ভুগতে হবে না কুশীলবদের। যৌনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরও সাবালক হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে ভারতীয় রুপোলি পর্দার দুনিয়া।