ইনি র্যাপ করেন বাংলায়। ‘গাল্লি বয়’-এর রিলিজের পর অভিনন্দন পুরকায়স্থর সঙ্গে কথা বললেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী।
আপনার কলারটিউনে বাজছে ‘বেহতি হাওয়া সা’। ‘গাল্লি বয়’-এর ‘আপনা টাইম আয়েগা’ চললে তো একেবারে পারফেক্ট ম্যাচ হত?
অভিনন্দন: (হাসি) ‘বেহতি হাওয়া সা’ আমার খুব পছন্দের গান। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটাও খুব ভাল লেগেছিল। আমিও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। রিলেট করতে পারি লাইফটা।
স্ট্রিম কী?
অভিনন্দন: ইলেক্ট্রিক্যাল। ফোর্থ ইয়ার।
ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে র্যাপিং? এ তো বিশাল একটা লাফ! কীভাবে হল?
অভিনন্দন: আমি প্রথম র্যাপ মিউজিক শুনি ক্লাস এইটে। জাস্টিন বিবারের ‘বেবি’ গানের মাঝখানে কিছু ইংরেজি শব্দ। প্রথমে বুঝতে পারিনি কী বলছে। বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞেস করতে বলল, “তাড়াতাড়ি কিছু বলছে।” প্রায় ১০-২০ বার শোনার পর বুঝলাম, একটা কবিতা। তার পর ইন্টারনেট ঘেঁটে জানলাম ওটাকে র্যাপ বলে। মানে রিদম অ্যান্ড পোয়েট্রি (Rap)।
তার পর?
অভিনন্দন: তার পর র্যাপ মিউজিক শুনতে শুরু করলাম। যখন কলেজে ভরতি হলাম, র্যাপ নিয়েও তখন পড়াশোনা চলছে। একটা কবিতা লিখলাম। কলেজের বন্ধুদের শোনালাম। ওদের খুব ভাল লেগেছিল। তার পর একের পর এক কাজ করতে শুরু করলাম।
বাংলা ভাষায় র্যাপ খুব একটা শোনা যায় না। হিন্দিতে শুরু করলে কি আরও ভাল হত?
অভিনন্দন: আমি বাঙালি। ভাষাটা আমার খুব প্রিয়। উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় ৯১ পেয়েছিলাম। বাঙালি হয়েও তো এখন লোকে বাংলায় কথা বলে না। ভাবলাম আমি অন্তত বাংলায় লিখি।
[ বসন্তে হয়ে উঠুন স্টাইলিশ, পোশাকে থাকুক সাহসিকতার ছোঁয়া ]
আপনার ইউটিউব চ্যানেল– ‘ওল্ড বয় অ্যান্ড অগ্নি’, তার সাবস্ক্রাইবার বেশির ভাগই ওপার বাংলার মানুষ।
অভিনন্দন: বাংলাদেশে আমার একটা ফ্যান বেস আছে। আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে মনেপ্রাণে বাঙালি ওদেশে বেশি।
‘গাল্লি বয়’-এর গানগুলো কেমন লাগছে?
অভিনন্দন: রণবীরের গলায় গানগুলো শুনতে ভাল লাগছে। কিন্তু ‘গাল্লি বয়’ অরিজিনাল ভার্সনটাই আমার বেশি পছন্দের।
নিজেকে কি অনেকটা রণবীর সিং কিংবা ডিভাইনের মতো লাগল?
অভিনন্দন: না। আমি নিজেকে অনেকটা নেইজির সঙ্গে রিলেট করতে পারি। ও আমার ইন্সপিরেশন। যে সব বিষয় নিয়ে নেইজি র্যাপ করে, সেগুলো আমার জীবনের অনেক ক্ষেত্রের সঙ্গে মিলে যায়।
টলিউড ছবিতে আজকাল র্যাপ মিউজিক ব্যবহার করা হয়। গায়ক বাঙালি নন। গানের কথাও ইংরেজি কিংবা হিন্দি। এটাকে কীভাবে দেখেন?
অভিনন্দন: খারাপ লাগে। বাংলায় র্যাপে দারুণ সব কাজ করছেন। এমসি অভীক, অনুজ কিংবা স্পিল ফ্রিকের মতো আর্টিস্ট খুব ভাল কাজ করছেন। কিন্তু যতই ভাল কাজ করুন না কেন, টলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমাদের মতো আর্টিস্টের কোনও জায়গা নেই।
‘গাল্লি বয়’ কি র্যাপ সংগীতকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করবে?
অভিনন্দন: সারা দেশে র্যাপ ভীষণ ট্রেন্ডিং মিউজিক। কিন্তু কলকাতায় খুব একটা পপুলার নয়। দিল্লি-মুম্বইয়ে ক্লাবে র্যাপ সিঙ্গাররা পারফর্ম করে। এখানে সেটা মাচা আর ইউটিউবে সীমিত। একটা ছবি রিলিজের পর র্যাপের পরিচিতি রাতারাতি বাড়বে না মনে হয়।
কী কী বিষয় নিয়ে গান লেখেন আপনি?
অভিনন্দন: সমসাময়িক ঘটনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিষয়। এমন কোনও ঘটনা যা আমাকে ভাবায়।
[ প্রেম হোক অবাধ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেই রয়েছে গোপন জায়গা ]
দেশ-বিদেশের র্যাপ আর্টিস্টদের গান শোনেন?
অভিনন্দন: আন্তর্জাতিক মিউজিকের মধ্যে, নাজ, রাকিম, এমিনেম, জে জি, বিগিদের কাজ খুব ভাল লাগে। এ দেশে নেইজি, ডিভাইন, ব্রোধা ভি, বিকে।
আপনাপ র্যাপ মিউজিক বাবা-মা সাপোর্ট করেন?
অভিনন্দন: শুরুর দিকে করতেন না। তবে এখন বুঝতে পারেন যে, আমি ঠিক দিকেই এগোচ্ছি। র্যাপ মিউজিক আমার কাছে পড়াশোনার মতোই জরুরি।
হানি সিং গানে গালাগালি রেখে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। রাতারাতি স্টার হওয়ার জন্য সে চেষ্টাও কি করবেন?
অভিনন্দন: হানি সিং কিংবা বাদশার মতো র্যাপ গান করা খুব সহজ। লিরিক্সে কিছু গালাগাল, কয়েকটা মদের ব্র্যান্ডের নাম, আর ভিডিওতে কিছু মডেলদের নাচানাচি থাকলেই হিট। বাংলাতেও এরকম গান আছে। কিন্তু এরকম গান শুনে নতুন প্রজন্ম কিছু শিখতে পারবে না। এমন কিছু করতে হবে যা নতুন। একটা ধামাকা চাই। ‘গাল্লি বয়’-এর মতো একটা গান চাই। যে গানের পর ডিভাইন-নেইজি রাতারাতি স্টার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও কুরুচি নেই। আমিও এরকম গান তৈরি করছি।
বাংলা র্যাপ মিউজিকের ভবিষ্যৎ কী?
অভিনন্দন: আমরা যারা র্যাপ করি, তারা প্রত্যেকেই আশাবাদী। বছর দশেক আগে সোশ্যাল মিডিয়া কি এত জনপ্রিয় ছিল? না। কিন্তু এখন সবার হাতে মোবাইল আর তাতে ইন্টারনেট। র্যাপ মিউজিক এখন হয়তো কেউ শুনছে না। কিন্তু কে বলতে পারে বছর পাঁচেক পরেও শুনবে না?
The post ব়্যাপ করেন খাঁটি বাংলায়, কলকাতার ‘গাল্লি বয়’কে চেনেন? appeared first on Sangbad Pratidin.