সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের সাহিত্য জগতের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সম্মান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ঘোষণা ঘিরে নজিরবিহীন বিতর্ক। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লির রবীন্দ্র ভবনে পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণার জন্য সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। স্বশাসিত সাহিত্য অকাদেমির কাজে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সাহিত্যিক মহলে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। একাধিক বিরোধী দলও ঘটনার নিন্দা করেছে।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ ২৪টি ভারতীয় ভাষায় এ বছরের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপকদের নাম ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই অকাদেমির এক্সিকিউটিভ বোর্ডের বৈঠকে নাম চূড়ান্ত করা হয় বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সূত্রের দাবি, সাংবাদিক বৈঠক শুরুর কয়েক মিনিট আগে মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা বোর্ডকে জানান, আপাতত পুরস্কার ঘোষণা করা যাবে না। কেন্দ্র বিজয়ীদের নাম নতুন করে খতিয়ে দেখতে চায়। তা দেখার পরই প্রাপকদের নাম ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া পুরস্কার প্রদানের নিয়মনীতি বা কাঠামোয় কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাবও দেওয়া হয় মন্ত্রকের তরফে।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় অকাদেমির অন্দরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, মন্ত্রকের এই আচরণ সংস্থার স্বশাসনকে খর্ব করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্যের অভিযোগ, বোর্ড বিজয়ীদের নাম চূড়ান্ত করার পরেও হঠাৎ কেন্দ্র থেকে তালিকা ঘোষণা স্থগিতের নির্দেশ আসে এবং মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া কোনও তালিকা প্রকাশ করা যাবে না বলে জানানো হয়। তাঁর মতে, বিষয়টি অত্যন্ত অসম্মানজনক এবং অনভিপ্রেত। মন্ত্রকের তরফে মউ স্বাক্ষর বা কাঠামোগত পরিবর্তনের যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও বোর্ডের অন্দরে ভিন্নমত রয়েছে।
এ বিষয়ে সোশাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন সাহিত্য অকাদেমির প্রাক্তন সচিব তথা কেরলের বিশিষ্ট কবি কে সচ্চিদানন্দন। ফেসবুকে তিনি লেখেন, জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত এক্সিকিউটিভ বোর্ড অনুমোদন করার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার পুরস্কার ঘোষণা আটকে দিয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি আরও লেখেন, অকাদেমির স্বায়ত্ত্বশাসন হারানোর যে আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল, এই ঘটনায় তা সত্যি প্রমাণিত হল এবং গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের পতন ঘটল। যদিও সাহিত্য অকাদেমির প্রেসিডেন্ট মাধব কৌশিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তালিকা চূড়ান্ত করতে আরও দু-একদিন সময় লাগবে এবং কেন্দ্র থেকে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ হয়নি। তাঁর মতে, শেষ মুহূর্তে তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি বলেই ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে, এ নিয়ে নানা জল্পনা অমূলক।
প্রতি বছর সাধারণত ২৪টি ভাষার সেরা সাহিত্যকীর্তিকে এই সম্মান দেওয়া হয়। তবে এবার কেন্দ্রের আপত্তিতে তালিকায় বড়সড় কোনও পরিবর্তন আসে কি না এবং স্বশাসিত এই সংস্থার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আগামী দিনে কতটা বড় বিতর্কের জন্ম দেয়, সেদিকেই এখন নজর সাহিত্য মহলের।
