সুকুমার সরকার, ঢাকা: প্রতি বছর বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ বজ্রপাতে (Lightening) প্রাণ হারান। বিশেষ করে বর্ষাকালে খেতে-খামারে কৃষিকাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে মৃত্যু হয় অন্নদাতাদের। মাঠের ধারেকাছে কোন বাড়িঘরও থাকে না যে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে যাবেন সেখানে। তাই এ সময়টায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অধিক। দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে (Bangladesh) মার্চ থেকে জুন মাসে এভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সর্বাধিক। খালি মাঠে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ২০০র বেশি অন্নদাতার মৃত্যু ঘটে। শুধু কৃষক নয়, অসাবধানতাবশত বজ্রপাতে প্রাণ হারান সাধারণ মানুষজনও।
এমন নিদারুণ করুণ পরিণতি দেখে বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের উত্তর জনপদ জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদের উদ্যোগে দুর্গম ও জনবসতি বিহীন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘কৃষকের ছাউনি’ নামে একটি আশ্রয়স্থল। এতে ঝড়বৃষ্টির সময় কৃষকরা সহজে নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবেন। আর এই উদ্যোগটি ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে সর্বত্র। প্রাথমিক অবস্থায় তিনটি কৃষকের ছাউনি নির্মাণ করে সুফল পেয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।
[আরও পডুন: অবশেষে রহস্যভেদ! অযোধ্যা পাহাড়তলির জঙ্গলে লাগাতার অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে চোরাশিকারি]
গত এক বছরে সারাদেশে বজ্রপাতে প্রায় ২৩০ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে আরো অর্ধশত কৃষক। আর এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ দুর্গম জায়গায় কাজ করা কৃষকদের তাৎক্ষণিক আশ্রয় না পাওয়াকে চিহ্নিত করেন। এরপর ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষককে রক্ষার উপায় খুঁজতে থাকেন তিনি। বাস ও ট্রেন যাত্রীদের বসার জন্য যাত্রী ছাউনি দেখে চিন্তা করেন কৃষকের জন্য এমন একটি নিরাপদ ছাউনি নির্মাণের। তার ভাবনা বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শ চান তিনি। পরে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারি।
[আরও পডুন: ‘হাওয়া বয় শনশন’! মঙ্গলে বায়ুপ্রবাহের শব্দ রেকর্ড করে পাঠাল নাসার বিশেষ যান]
তাঁর ব্যক্তিগত অর্থায়নে চলতি বছরের মার্চ মাসে বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ রক্ষায় প্রাথমিক তিনটি ‘কৃষকের ছাউনি’ নির্মাণ করা হয়। এতে ধানের খড় ও বাঁশ দিয়ে গোলাকৃতির একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বজ্রপাত রুখতে একটি আর্থিং (লোহার দণ্ড) বসানো হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে কৃষকের তৃষ্ণা মেটাতে নিরাপদ সুপেয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে সেখানে। এতে তিনটি কৃষকের ছাউনি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা। টেকসই ও মানসম্মত এ ঘরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সহজে রক্ষা পাচ্ছেন কৃষক। ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে একটু ছায়ায় গা জিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রাথমিক অবস্থায় এই ছাউনি কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সর্বত্র এমন কৃষকের ছাউনি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।