অভিরূপ দাস: সদিচ্ছাও হার মানলো অসহযোগিতার কাছে। অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও দেহ দান করতে পারলেন না নিপা মারিক। করোনা পরিস্থিতিতে বড়সড় প্রশ্নের মুখে মরণোত্তর দেহদান। চিকিৎসক থেকে শুরু করে দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাক্তিরা জানিয়েছেন, করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতিতে অবস্থা এমন যে, সচেতন পদক্ষেপ হিসেবে করে যাওয়া দেহদানের অঙ্গীকার বহু ক্ষেত্রেই হার মেনেছে। সেমতাবস্থায় দেহদান করতে চেয়েও ঘাড়ধাক্কা খেতে হল নিপা মারিকের পরিবারকে।
মৃত্যুর পর কাজে লাগুক নশ্বর দেহটা। তেমনটাই চাইতেন নিপা। সেই কারণেই দেহ দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সোমবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) ইছাপুরের বাসিন্দা ৪৬ বছর বয়সী নিপা মারিকের। তাঁর পরিবারের লোকেরা দেহ নিয়ে আসেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। অভিযোগ, অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও ইছাপুরের বাসিন্দা নিপা মারিকের মরদেহ দান করা সম্ভব হয়নি। নিপার পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ তাদের জানায় স্থানাভাব রয়েছে। মরদেহ গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
[আরও পড়ুন: পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছে স্ত্রী! স্রেফ সন্দেহের বশে তরুণীর উপর অ্যাসিড হামলা স্বামীর]
এরপর মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের অগ্রনী সংস্থা গণদর্পণ-এর সহয়তায় ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজে দান করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শেষমেশ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগেও মরদেহ দান করা সম্ভব হয়নি। গণদর্পণ-এর সম্পাদক শ্যামল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দেহ রাখা হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মঙ্গলবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মরদেহ দানের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল থেকে মরদেহ নিতে গিয়ে দেখা যায় যে নিপা মারিকের কোনও কোভিড টেস্ট নেই। বর্তমানের নিয়ম অনুযায়ী কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া মরদেহ দান করা সম্ভব নয়।
এদিকে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ গণদর্পনের আধিকারিকরা। পেটে টিউমার নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন নিপা। এই মুহূর্তে যে কোনও অসুখ নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হলে কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক। প্রশ্ন উঠছে, এত দিনে নিপাদেবীর কোভিড টেস্ট হয়নি কেন? এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি সহকারী সুপার ডাঃ শিল্পী ঘটক। শ্যামল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অনেকেই দেহদান করেন না। একজন সচেতন হয়ে দেহ দান করলেন, তা নেওয়া গেল না। এইধরণের ঘটনা মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনকে ব্যহত করবে।