চেহারা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, উপস্থিতি, বাচনভঙ্গি, পোশাকআশাকে অত্যন্ত সাধারণ অনিল বিশ্বাস। কিন্তু অসাধারণ তাঁর সততা, আন্তরিকতা, ব্যবহার, জনসংযোগ, দক্ষতা এবং মস্তিষ্কের প্রয়োগ। ঠান্ডা মাথায় কঠিন পরিস্থিতি সামলাতেন, অথচ প্রচারবিমুখ, সংযমী। আমরা, অঘটন না ঘটলে যারা এখনও আরও কিছুদিন সাংবাদিকতা করব, কিংবা রাজনীতি করব, এই প্রজন্মের জন্য তো অনিলদার অভিভাবকত্বটা পাওনা ছিল। কলমে কুণাল ঘোষ
পার্টি-অন্তঃপ্রাণ? অবশ্যই হ্যাঁ। কিন্তু পার্টি-সর্বস্ব? অবশ্যই না। অনিল বিশ্বাসের রুচি, ক্রিয়াকলাপ, উদারতা, সবই আপাতদৃশ্য মাপা গণ্ডির বাইরে।
বছর ২৬ আগের কথা। পুরনো নথি-সূত্রে খবর করলাম, ঝাঁসিরর রানি লক্ষ্মীবাইয়েরও ৬০ বছর আগে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন এক মহিলা। এই বাংলারই। মেদিনীপুরের কর্ণগড়ের রানি শিরোমণি। ঘটনাস্থলে গেলাম। দেখলাম উপেক্ষিত ইতিহাস। চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাসের আড়ালে ঢাকা বিদ্রোহিনীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, গ্রাম, মন্দির। লিখলাম। বিপুল সাড়া। অনিলদা ডাকলেন, সব জানতে চাইলেন। বললাম, ‘রানি শিরোমণিকে সামনে আনতে কিছু করা যায় না?’
অনিলদা করলেন। এবং যা করলেন, তা ভাবা যায় না। পার্টিকে বললেন ঘটনার ২০০ বছর পালন করতে। সমাবেশ হল। অনিলদার অনুরোধে জ্যোতি বসু গেলেন। সেমিনার হল। অনিলদা গেলেন। বললাম, ‘মেদিনীপুর শহরে তো সেমিনার। কর্ণগড় যাবেন না?’ বললেন, ‘পার্টির ওরা যে বলল অনেকটা দূর, যাওয়া কঠিন। ঠিক আছে, দেখছি। তুমি যাবে তো?’
আমি আর চিত্র-সাংবাদিক প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই পৌঁছে গেলাম। অনিলদা পার্টিকে জানালেন কর্ণগড় যাবেন। জেলা পার্টি দপ্তর থেকে সঙ্গে গেলেন দীপক সরকারও। প্রথমে রানির মন্দির। অনিলদা ঢুকলেন। সব কাহিনি শুনলেন। প্রবীরদা মন্দিরের মা কালীর মূর্তির সামনে দাঁড় করিয়ে অনিলদার ছবি তুলল। এরপর রানির দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। আরও ভিতরে। গাড়ি তো যাবেই না। টিলার খাড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে পারাং নদী। জল কম। অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। পারাং নদী পার হয়ে উপরে না উঠলে দুর্গে যাওয়া যাবে না। সবাই ভাবছেন, অনিলদা কী করবেন। হাসতে হাসতে নিজেই বললেন, ‘যাব।’ এরপর নিজের চটিজোড়া হাতে নিয়ে পাজামা গুটিয়ে নেমে পড়লেন জলে। হেঁটেই নদী পার। শিরোমণির দুর্গ দেখে এলেন অনিলদা। বিকেলে সেমিনারে দুর্দান্ত বক্তৃতা।
[আরও পড়ুন: আফগানিস্তান থেকে ইরান, ধর্মোন্মাদে হারিয়ে যাচ্ছে মানবমূল্য]
একটু অন্য প্রসঙ্গ। ২০০৩-’০৪ এর কথা। বন্ধুস্থানীয় এক তরুণ শিল্পোদ্যোগী সমস্যায়। অভিযোগ, স্থানীয় সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রেষারেষির শিকার তিনি। একা হাতে লড়ে তৈরি প্রতিষ্ঠান। কাজকর্ম নাজেহাল। তরুণ শিল্পোদ্যোগীর অনুরোধ, যদি একটু অনিলদাকে বলি। বললাম। এককথায় সময় দিলেন। খোলামেলা কথা বললেন। অভিযোগ শুনলেন। নিশ্চিত হলেন যে, অভিযোগের ভিত্তি আছে। ফোনে কথা বললেন এক মন্ত্রীর সঙ্গে। তারপর বললেন, ‘যান, মন দিয়ে ব্যবসা করুন। আর কোনও সমস্যা হলে বলবেন।’ এখানেই শেষ নয়। যখন আমিও ঘটনা ভুলতে বসেছি, তখন হঠাৎই একদিন বলে উঠেছেন, ‘তোমার ওই বন্ধুর সব ঠিকঠাক চলছে তো?’
মৌলালির ছোট্ট ফ্ল্যাট। স্ত্রী গীতা বিশ্বাস, কন্যা অজন্তা। অজন্তা এবং তার স্বামী পুষ্পসৌরভ এখনও অনিলদার সবিনয় ভদ্রতার সংস্কৃতিটা ধরে রেখেছে। বউদি ওঁদের কাছেই থাকেন। সকালে মাঝেমধ্যে বাজার। আমজনতার সঙ্গে আলাপচারিতা। সওয়া ন’টা অবধি নিজেই ফোন ধরতেন। তারপর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বৈঠক, কাজ। দুপুরে একটু বাড়ি। বিকেল থেকে রাত পার্টি অফিস। এরই মধ্যে লেখালিখি, কর্মিসভা, কর্মসূচি।
পড়তেন, লিখতেন। জাতীয়, আন্তর্জাতিক নানা বিষয় বহু দেশে গিয়েছেন। প্রবন্ধ, বই, সংকলন যা করেছেন, তা গবেষকদের অবশ্যপাঠ্য। এবং অনিলদার প্রাণ ‘গণশক্তি’। শুধুমাত্র পার্টি পত্রিকা নয়। গণশক্তিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো সম্পূর্ণ পত্রিকা করেছেন। একটা ঝকঝকে নতুন টিম তৈরি করেছেন। পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিশ্চিন্ত করেছেন। সময়োপযোগী চেহারা দিয়েছেন। এবং পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন আজকের বৈদ্যুতিন মাধ্যমের দিকেও। অনিলদা, শুধুমাত্র সাধারণ কমিউনিস্ট নেতা নন। তিনি পড়ুয়া, লেখক এবং এক দূরদর্শী সাংবাদিক।
চেহারা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, উপস্থিতি, বাচনভঙ্গি, পোশাক-আশাকে অত্যন্ত সাধারণ অনিল বিশ্বাস। কিন্তু অসাধারণ তাঁর সততা, আন্তরিকতা, ব্যবহার, জনসংযোগ, দক্ষতা এবং মস্তিষ্কের প্রয়োগ। পার্টিতে নাম ‘চাণক্য’। ঠান্ডা মাথায় কঠিন পরিস্থিতি সামলাতেন, অথচ প্রচারবিমুখ, সংযমী। প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে জ্যোতি বসু-কেন্দ্রিক বিতর্ক, সম্পাদক পদে বসেও সিনিয়রদের পক্ষ রাখা, ২০০১-এ বসুর অবসর এবং বুদ্ধর অভিষেক, সইফুদ্দিনরা দল ভাঙলেও সুভাষকে ধরে রাখা, মুখ বুজে বহু অপারেশন সেরেছেন অনিলদা।
আবেগটা শুধু ধরে রাখতে পারেননি কন্যার ক্ষেত্রে। অজন্তা কৃতী ছাত্রী, দক্ষ নেত্রী, নিজের যোগ্যতায় অধ্যাপিকা। শিক্ষাজগতের সঙ্গে ওতপ্রোত যোগাযোগ অনিলদার। তবু, মেয়েকে এক ইঞ্চি বাড়তি সুবিধা দেননি। অজন্তা ধীরে ধীরে বড় হয়েছেন, এক-এক করে সাফল্য এনেছেন, উচ্ছ্বসিত হয়েছেন বাবা। যে-মানুষটা নিজের কোনও খবর বা ছবির জন্য কখনও কাউকে অনুরোধ করেননি, এই সেদিন দেখেছি মেয়ের জন্য তাঁর শিশুর সারল্য। একদিন বললেন, ‘জানো তো, মৌ ইতিহাস কংগ্রেসে খুব ভাল কাজ করছে।’ তার দু’দিন পরে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ফোন। বললেন, ‘মৌ ইতিহাস কংগ্রেসের সভায় খুব ভাল বক্তৃতা করেছে। আমার কাছে একটা ছবি আছে। অসুবিধা না হলে একটু ছাপিয়ে দেবে?’
সত্যি বলছি, এমন একটা প্রচারবিমুখ নক্ষত্র যে বাবার ভূমিকায় এসে এতটা নরম, দেখে আমি অভিভূত। বললাম, ‘ছবিটা বিকেলে আনিয়ে নেব।’ বিকেলে সিপিএম অফিসে গেল আমাদের রিপোর্টার সুতপা সেন। খামে ভরা ছবি এল। প্রকাশিত হল। পরদিন আবার ধন্যবাদের ফোন। আবার এই সুতপা-ই সেদিন এসে বলল, ‘অনিলদা খুঁজছেন। ফোন কর।’ বললাম, ‘কেন?’ সুতপা বলল, ‘জানি না। বিকেলে পার্টি অফিসে দেখা হল। বললেন, কুণাল কোথায় বলো তো? ওকে একটু বকব।’
তা, সেই বকুনি খেয়েছি! মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কোনও একটি জেলার সংবাদে সাংবাদিক যে খবর পাঠিয়েছে, তাতে সিপিএমের তীব্র আপত্তি ছিল। অনিলদার সাফ কথা, ‘ঠিক নয়। তোমাদের দেখেশুনে ছাপা উচিত। বুদ্ধ খুব রেগে আছে।’
বুদ্ধদেববাবু যে রেগে আছেন, সেটা শুনলাম অনিলদার মুখে। কিন্তু এই যে বছর পনেরো-ষোলো দেখছি, নিজের কোনও ঘটনা, কোনও খবরে রাগ, প্রতিক্রিয়া দেখিনি। দেখলাম এই এতদিন বাদে। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন বিদেশি ব্যাংকে বিপুল টাকা আছে অনিল বিশ্বাসের। আদ্যন্ত সৎ মানুষটা এত বড় মিথ্যা অভিযোগটা সহ্য করতে পারেননি। তদন্তে দেখা যায় এসব ডাহা মিথ্যা। অনিলদা মামলা করেন। এই একটা ক্ষেত্রে ‘শেষ দেখে ছাড়ব’ পর্যন্ত মানসিকতা নিয়ে গিয়েছিলেন।
এখানেই আর-এক ‘আনটোল্ড স্টোরি’। বিষয়টি অনিলদা বলেন আমাকে, আমি দিদিকে জানাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিপিএম দুর্নীতিগ্রস্ত পার্টি। বহু নেতাও দুর্নীতি করেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অধীর অনিল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যা বলেছেন, আমি তার সঙ্গে একমত নই।’ মমতাদির এই কথা শোনার পর অনিলদা নির্দ্বিধায় টেলিফোনে নিজে তৃণমূল নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। যেহেতু সেটি আমার ফোন থেকে হয়েছিল, তাই এটি আমার এক অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। ফোন রাখার পর নিজের অদ্ভুত মূল্যায়ন শুনিয়েছিলেন মমতাদি সম্পর্কে। যেখানে বহু সিপিএম নেতাই ব্যক্তিগত আলোচনাতেও মমতাদি সম্পর্কে অতিমাত্রায় বিরূপ, অনিলদা ব্যাখ্যা করেছিলেন অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে। মমতাদির দল বা রাজনীতিকে আক্রমণ করেছেন, কিন্তু একা দল চালানোর কৃতিত্ব, স্বার্থান্বেষীদের চাপ সামলে দাপটে রাজনীতি করার প্রশ্নে ব্যক্তিগত মূল্যায়নে তৃণমূল নেত্রীকে সম্মানের জায়গাতেই রেখেছিলেন তিনি। আর এই উদারতাই বোধহয় অনিলদার উচ্চতাটাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক গুণ। একবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলে ফেলেছিলেন, ‘উনি দিদি থেকে দিদা হয়ে যাবেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হবেন না।’ পরদিন নিজেই বলেছিলেন, ‘আমার ওই কথা বলা ঠিক হয়নি।’
হ্যাঁ, অনিলদার শূন্যতায় সিপিএমের ক্ষতি, বামফ্রন্টের ক্ষতি। কিন্তু, অনিলদার অকাল-প্রয়াণে ক্ষতি রাজ্য রাজনীতির। মধ্যবিত্ত ঘরানার স্বচ্ছ রাজনীতির। অনিলদা ছিলেন উদাহরণ।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে নিজের মেধা, নিজের যোগ্যতায় সামনের সারিতে আসার উদাহরণ। যত মত তত পথের চোরাস্রোতের ঐকমত্যের উদাহরণ। সরকারি পদে না বসেও সরকারকে আরও গতিশীল, কার্যকর, সংবেদনশীল করার প্রভাব বিস্তারের উদাহরণ। ক্ষমতাসীন পার্টির চূড়ান্ত ক্ষমতাশালী হয়েও নিজেকে অতি-সাধারণ রাখার উদাহরণ। পরিস্থিতি যত কঠিন, প্ররোচনামূলকই হোক না কেন, ঠান্ডা মাথা আর মাপা কথার উদাহরণ।
আমরা, অঘটন না ঘটলে যারা এখনও আরও কিছুদিন সাংবাদিকতা করব, কিংবা রাজনীতি করব, এই প্রজন্মের জন্য তো অনিলদার অভিভাবকত্বটা পাওনা ছিল। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মানুষটা চিরবিদায় নেবেন, ভাবা যায়নি। অসুস্থতা ছিল, সময় কমে আসার অলিখিত অনুভূতি ছিল, কিন্তু শূন্যতাটা এভাবে এসে পড়বে, ভাবিনি।
অনিলদার দু’-চারটে বড় কাজের মধ্যে যেগুলি বলার মতো, ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই জ্যোতিবাবুকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করিয়ে বিরোধীদের পরিবর্তনের স্লোগান ভোঁতা করে দেওয়া। বুদ্ধবাবুই যেন পরিবর্তন। আর দল ছাড়তে যাওয়া সুভাষ চক্রবর্তীকে পার্টিতে ধরে রাখা। সুভাষদাকে উনি সামলাতেন হাসতে হাসতে। একবার সুভাষদার জেদ, বিমানবন্দরের কাছে ট্রাক টার্মিনাল করবেন। এ নিয়ে কত ঝগড়া। অনিলদা ডেকে একগাল হেসে সুভাষদাকে বলেছিলেন, ‘ট্রাক টার্মিনাল মানেই তো আকাশে চিল-শকুনের ভিড়। বিমানবন্দরের আকাশে ওসব ঠিক হবে?’ সুভাষদা এককথায় নরম। ২০০৬ তো অনিলদা জয়ের ভিত গড়ে গিয়েছিলেন আরেকরকম পরিবর্তন দিয়ে। এতদিনের সরকার। মেদ অনেক। প্রতিষ্ঠানবিরোধী ইস্যু প্রচুর। ২০০১-এ অনিলদা মুখ বদল করেছিলেন, ২০০৬-এ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। কম-বেশি দেড়শো প্রার্থী বদল। নতুনত্বের হাওয়া সব কেন্দ্রে। শুধু এক বর্ষীয়ানকে অবসর নিতে দেননি তখন। শারীরিক কারণে দূরের আমডাঙা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে বাড়ির কাছের এন্টালিতে, তিনি স্পিকার হাসিম আবদুল হালিম।
আমি নিজে একদম সিপিএম না। বরং বিরোধী। এলাকাতেও সিপিএমের সঙ্গে রেষারেষি। কিন্তু অনিলদার প্রয়াণের বছর আমাদের রামমোহন সম্মিলনীর দুর্গাপুজোয় বিরাট প্রদর্শনী করেছিলাম অনিলদাকে নিয়ে। ছবি দিয়েছিল ‘গণশক্তি’। অভীকদা, অতনুদারা সাহায্য করেছিল খুব। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য। পুজোর উদ্বোধক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়দা। অনিলদাকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখে প্রশংসা করেছিলেন। এইরকম স্পিরিট আজকের রাজনীতিতে হারিয়ে যাচ্ছে। মমতাদি মুখ্যমন্ত্রী হন, সিপিএম হারুক, এটা চাইতাম। কিন্তু ঘটনা হল, অনিলদা বেঁচে থাকলে বুদ্ধবাবুর পর-পর ভুল গিলে খাওয়ার সুযোগ সহজে দিদি পেতেন না।
সেই সময় একটা অদ্ভুত লড়াই চলত, জননেত্রীর গণ-আন্দোলন বনাম অনিলদার মস্তিষ্ক। পেনাল্টি বক্সের মাথায় বল পেলে মমতাদি অপ্রতিরোধ্য, দেখার মতো বিষয় হত- অনিলদা ইস্যুগুলিকে নির্বিষ রাখতেন কী করে। ইস্যু পেয়ে গেলে দিদি গোল করতেনই। অনিলদার স্টাইল ছিল ঢেউ সাগরতট অবধি আসবে না, জলেই ভেঙে শেষ হয়ে যাবে। বঙ্গ-রাজনীতির এই অধ্যায়টি কারওরই আর দেখা হয়ে ওঠেনি। যদিও আমার ধারণা, সিপিএমের ক্ষয় এত বেড়ে গিয়েছিল, একটা পর্যায়ের পর অনিলদা আর গোটাটা সামলাতে পারতেন না। মমতাদির পদধ্বনি স্পষ্ট হচ্ছিল।
অনিলদা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে উডল্যান্ডসে ভরতি হন। সেদিনই আমি দিল্লি গিয়েছি। তার ক’দিন আগে বেলা তখন বারোটা। আলিমুদ্দিন থেকে ফোন- ‘ধরুন, অনিলদা কথা বলবেন।’ অনিলদা বললেন, ‘একবার আসবে?’ গেলাম। একটা অনুরোধ করলেন। সেই কাজটা যে হয়ে গিয়েছে, সেটা আর জানানোর সুযোগ দিলেন না। কী অনুরোধ? কী কাজ? এটা আমি কাউকে বলবও না, লিখবও না।