স্টাফ রিপোর্টার: ছিল রুমাল। হয়ে গেল বেড়াল!
নারকেলডাঙা হাই স্কুল থেকে উঠবেন। নামবেন চাঁদনি চকে। এই মর্মে শনিবার বিকেলে অ্যাপ ক্যাব বুক করেছিলেন নির্মল সেন। সংশ্লিষ্ট ক্যাব সংস্থার তরফে এসএমএসে তাঁকে জানানো হয়েছিল ভাড়া পড়বে ৬৯ টাকা। কিন্তু চাঁদনি পৌঁছে ড্রাইভার হেঁকে বসলেন ১৩৬ টাকা ৮১ পয়সা! কারণ সংস্থার তরফে তাঁর মোবাইলে সেই বিলই এসেছে।
শুরু তর্কাতর্কি। স্থানীয় লোকজন যাত্রী ও ড্রাইভারের মেসেজ দেখে বিভ্রান্ত। শেষমেশ কাজের তাড়ায় নির্মলবাবুই রণে ভঙ্গ দিলেন। ১৪০ টাকা হাতে ড্রাইভারের হাতে গুঁজে দৌড় লাগালেন অফিসের দিকে। ব্যালেন্স ফেরত নেওয়ারও সময় ছিল না।
[ সাউথ এন্ডে বিষাদের সুর, ভেঙে পড়ছে শচীন কর্তার জলসাঘর ]
ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ ট্যাক্সিতে চেপে নির্মলবাবুর মতো ভোগান্তি রোজ শ’য়ে শ’য়ে মানুষের হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শুনে সংস্থাগুলি জানাচ্ছে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট দূরত্ব ও আনুমানিক সময় বিচার করে প্রাথমিকভাবে একটা ভাড়া ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে যানজটে ফেঁসে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ভাড়ার পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়। সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
কিন্তু পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ঘটনার কথা প্রায়ই তাঁদের কানে আসছে। যা কনজিউমার অ্যাক্টের বিরোধী। এটা চিটিং। কারণ কেউ এক ভাড়ায় গাড়ি বুক করার পর মাঝ রাস্তায় ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার কোনও অধিকার কোনও সংস্থার নেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরাও। তাই নয়া আইনে এই অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকে বাধার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। শহরে যে প্রধান দুই ক্যাব সংস্থার গাড়ি চলে, তাদের বেশ কিছু নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। দপ্তর সূত্রে খবর সেখানে বলা হয়েছে, কোনওভাবেই মাঝপথে ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। একবার যে ভাড়ায় রাজি হবে সংস্থা, সেই ভাড়াতেই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে। সারচার্জ নেওয়া গেলেও তার সীমা বেঁধে দিতে দুই সংস্থাকেই বলেছে পরিবহণ দপ্তর। সেক্ষেত্রে যে যত কমাবে তত লাভবান হবেন যাত্রীরা। ঝড়-বৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সারচার্জ নেওয়া যাবে না। যে চালককে রাখা হবে, তাঁকে প্রতারিত করা যাবে না। পরিবহণ দপ্তরের তরফে ওলা এবং উবের সংস্থাকে পুরো বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়ে পনেরো দিনের মধ্যে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।
[ ইদে সর্বশিক্ষা মিশনের অফিস খুলে রাখার নির্দেশ, সরকারকে হেয় করার অভিযোগ ]
অ্যাপ ক্যাবের ভাড়ার কারচুপিতে এখন নাজেহাল অনেক যাত্রীই। ক্যাব বুক করার সময় দেখাচ্ছে এক ভাড়া। রাস্তায় থাকতেই ‘পপ আপ’ মেসেজ ঢুকছে যাত্রীর ফোনে। ভাড়া হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। যাত্রীদের প্রশ্ন, এভাবে ভাড়া বাড়ালে কম টাকার মেসেজ দেখানোর মানে কী? প্রথম পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব ৬৯ টাকায় যেতে পারবেন বলে মেসেজ পাঠাচ্ছে সংস্থা। অথচ গাড়িতে উঠতেই বদলে যাচ্ছে হিসেব। এমনকী অভিযোগ, যাত্রীরা জানতে চাইলে যে রুট দেখানো হচ্ছে, সেখান দিয়ে আদৌ গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়নি। অর্থাৎ রুটেও চলছে কারচুপি। প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। গাড়ির চাহিদা আছে এই অজুহাতে যে দূরত্বের ভাড়া হওয়ার কথা ১৫০ টাকা, তারই ভাড়া ৪৫০ টাকাও নেওয়া হয়। ক্যাব সংস্থা সূত্রের ব্যাখ্যা, চাহিদার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কমলেই ভাড়ার সঙ্গে সারচার্জ নেওয়া হয়। ক্যাব সংস্থার এক অধিকারিক বলেন, “ডায়নামিক প্রাইসিংয়ের ভিত্তিতে আমাদের ভাড়া বাড়ে-কমে। তবে খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” শুধু তাই নয়, যাত্রীদের আরও অভিযোগ, হলুদ ট্যাক্সির মতো অ্যাপ ক্যাবও এখন যাত্রী প্রত্যাখ্যান করছে। বিষয়টি নিযে রাজ্য সরকারও উদ্বিগ্ন।
The post দুর্যোগে সারচার্জ নিতে পারবে না ‘অ্যাপ ক্যাব’, আসছে নয়া আইন appeared first on Sangbad Pratidin.