চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বরাকরের সিদ্ধেশ্বরী শিবমন্দিরে মণ্ডপ তৈরি, মন্দিরের গায়ে আলো লাগানো ও শিবলিঙ্গের শৃঙ্গারের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। শ্রাবণ মাসের গোড়া থেকেই নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মন্দিরের ভিতরে শৃঙ্গার চলছিল বলে অভিযোগ। এমনকী মন্দিরের গায়ে পেরেক পুঁতে আলোও টাঙানো হচ্ছিল। মন্দির চত্বরে বসেছিল মেলাও। এই খবর কানে যেতেই সল্টলেকের অফিস থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের পাঠিয়ে সোমবার সটান এই কাজগুলি বন্ধ করানো হয়। যদিও এই নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পাল যুগে সপ্তম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বরাকরে চারটে বড় মন্দির তৈরি হয়েছিল। কালো এবং ধূসর রঙের বেলেপাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরগুলির মধ্যে দু’টি শিবের, একটি দুর্গার এবং অন্যটি গণেশের। শিব মন্দিরের মধ্যে যেটি বড় সেটি সিদ্ধেশ্বরীর মন্দির বলে পরিচিত। মন্দিরের গায়ে শিলালিপি খোদাই করা রয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহের পিছনের দেওয়ালে খোদাই করা গণেশমূর্তি আছে। সামনে আছে তিনটি শিবলিঙ্গ। উত্তরদিকের মন্দিরের গর্ভগৃহে আছে মহিষমর্দিনী (কেউ বলেন যোগমায়া) মূর্তি এবং তিনটি শিবলিঙ্গ। বছর দশেক আগে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ওই চারটি মন্দিরের দেখভালের ভার নেয়। সংস্কারের পর থেকে মন্দিরের গায়ে পেরেক লাগানো, লাগোয়া এলাকায় মেলা বসানো, এমনকী মন্দিরের ভিতরে সিঁদুর লেপাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফি বছর শ্রাবণ মাসে ও শিবরাত্রিতে সেই নিয়মকানুনের লঙ্ঘন হচ্ছিল। শ্রাবণের প্রথম সোমবার প্যান্ডেল খাটিয়ে, মন্দিরের গায়ে পেরেক লাগিয়ে এলইডি আলো টাঙানো হয়েছিল। শিবের মাথায় জল দেওয়ার সময় সিঁদুর লেপে শৃঙ্গার হচ্ছিল। যাতে মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়াল ও শিলালিপিগুলি ক্ষতি হচ্ছিল।
[ আরও পড়ুন: অনশনের ২৪ ঘণ্টাতেই সাফল্য, আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের ডেকে পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী]
এ বিষয়ে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পূজারী মধু দেওঘরিয়া জানান, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা অফিস থেকে তাঁর কাছে ফোন এসেছিল। ফোনে শ্রাবণের পুজোর সময় শৃঙ্গার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি মণ্ডপ তৈরি, মন্দিরের গায়ে আলো টাঙানো বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার দুই কর্মী, মধু মোদি ও সঞ্জীব কুমার বরাকরে থাকেন। তাঁদের উপর মন্দির দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, “সল্টলেক অফিস থেকে আমাদের কাছে ফোন এসেছিল। যাতে মন্দিরের কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হয় তা দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকার কিছু মানুষের ক্ষোভ হলেও আমাদের কিছু করার নেই।”
[আরও পড়ুন: বাড়ি ফেরার সময় বাস দুর্ঘটনা, কেরলে মৃত পাথরপ্রতিমার তিন যুবক]
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কুলটি শাখা সম্পাদক শ্রীরাম সিংয়ের দাবি, “এভাবে শৃঙ্গার বন্ধ করা উচিত নয়। প্রতিবছর ধরে শ্রাবণ মাসে শিবলিঙ্গে শৃঙ্গার হয়ে আসছে। আমাদের এক প্রতিনিধি কলকাতা গিয়েছে। এই নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা।”তিনি আরও বলেন, “মন্দির থেকে দুই ফুট দূরে মণ্ডপ করা হয়েছে। তাতে মন্দিরের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।” স্থানীয় গবেষক সুখময় চক্রবর্তী বলেন, “মন্দিরের গর্ভগৃহের চৌকাঠের ডানদিকের পাথরের ওপর খোদাই করে দু’টি অংশে সংস্কৃত ভাষায়, বাংলা অক্ষরে শিলালিপি আছে। সেই লিপির মধ্যেও অতি ভক্তরা বোধ হয় ভগবান খোঁজেন। তাই লিপিগুলিও সিঁদুর লেপন থেকে রেহাই পায়নি।”
The post মন্দিরের মূর্তিতে দেওয়া যাবে না সিঁদুর, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের appeared first on Sangbad Pratidin.
Advertisement