সন্দীপ চক্রবর্তী: তিনদিন পর সোমবার ঝকঝকে রোদ উঠেছিল শ্রীনগরে। ঠান্ডাটাও ঠিক কাশ্মীরের সঙ্গে মানানসই নয়। আর এই আবহাওয়ায় যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। ডাল লেকের ঠিক চারধারের রাস্তা বাদে খৈয়াম চক, ইউনিভার্সিটি-সহ প্রায় সর্বত্র ব্যাপক যানজট। দু’পাশের দু’টি গাড়ির মাঝে অন্য গাড়ি পড়লেই এক অদ্ভুত প্যাঁচ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী শহরে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অনেকটাই আধাসামরিক বাহিনীর। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক ডিভিশনের হাতে বলেকয়ে দশ গোল খাবে। পর্যটকদের ট্রাভেলার গাড়ি যানজটের অবশ্যই বড় কারণ। এমন প্রত্যেকটা গাড়ি বাঙালিতে ঠাসা। আর তাই এই যানজটে শোনা যাচ্ছে বিরক্তিসূচক বাংলা শব্দ। কেউ আবার বলছে, কলকাতাতেও এত জ্যাম হয় না।
রবিবার খুলে গিয়েছে টিউলিপ গার্ডেন। আর তাই মরশুমের শুরুতেই উপত্যকা জুড়ে বাঙালির দাপট, ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু। হোটেল মালিক হিসাব দিলেন, শ্রীনগরের পর্যটনে বাঙালি একাই ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। বাকিদের মধ্যে গুজরাতি, মারাঠি ও দক্ষিণ ভারতীয়। বাংলার হিমগিরি বা জম্মু তাওয়াই হোক বা দিল্লি হয়ে ট্রেনে, বিমানে হোক, প্রতিদিন শ্রীনগরে পা পড়ছে চার থেকে পাঁচ হাজার বাঙালির। কলকাতা থেকে ৪০-৫০ জনের ছোট গ্রুপ হয়ে ১৮-২২ হাজারে আসছেন এঁরা। তাই শিকারা ভ্রমণে বাংলায় ডাক শুনলে অবাক হওয়ার নেই। পশমিনা বা সোয়েটারের দাম দর করার সময় ফিসফিসিয়ে বাংলায় কথা বললেও দোকানির হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।
[আরও পড়ুন: কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম ঘুরে দেখতে চান? অবশ্যই মাথায় রাখুন এই নিয়মগুলি ]
ডাল লেকে অন্তত সাতটি আধুনিক ফোয়ারা বসেছে। রাতে তাই আরও সুন্দরী। যে শহরে হজরতবাল মসজিদ আছে, আবার শঙ্করাচার্য তপস্যায় শিবশঙ্করের দর্শন পেয়েছিলেন, সেই শহরকে কেন বারবার রক্তাক্ত হতে হবে? বিস্ময় জাগে বইকি।
গুলমার্গের বরফের স্তর একটু পুরনো। কিন্তু সোনমার্গ বরফ সৌন্দর্যে অকৃত্রিম। প্রতিটি স্পটে বাঙালির প্রাধান্য। বরফকেলি। তবে শ্রীনগর একটু ঘিঞ্জি। টিউলিপ গার্ডেনের ভিড় যেন শীতের মরশুমে নিউটাউনের ইকো পার্ক। পার্কিংয়ে জায়গা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। পৃথিবীতে যে এত রং, পাহাড়ের কোলে সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রাখা এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ গার্ডেনে না এলে বোঝা যাবে না। কিছু ফুল এখনও ফোটেনি। বাকি ফুল যে মুঘল গার্ডেনের চশমে শাহী, শালিমার আর নিষাদ বাগে ফুটে রয়েছে। সৌন্দর্যের এই ফুলের নানা রঙের বাহার মিলিয়ে দিয়েছে দেশবিদেশের পর্যটকদের। আর এখন আতিথেয়তা দিতে ব্যস্ত কাশ্মীরের পরিবেশ আশ্চর্য রকমের শান্ত। কাশ্মীর এখন ভারতের অন্য রাজ্যের মতোই। উধমপুর থেকে অনন্ত নাগ বা বালতাল থেকে পহেলগাঁও, শান্তির নিবিড়তায় পুরোটাই অন্য কাশ্মীর। এমনিতে পর্যটকদের কেউ বিরক্ত করে না। কিন্তু এই কাশ্মীরে বোমা-গুলি তো দূরের কথা, উঁচু স্বরে কথা বলতেও দেখা যাবে না কাউকে। যে ছেলেটা মোবাইলে পিএসএলে লাহোরের ক্রিকেট ম্যাচ দেখে, সেও আর দু’দেশের রাজনীতির খবর রাখে না। তবু হাইওয়ে জুড়ে কড়া নজর রেখে যান বিএসএফ-সিআরপিএফ জওয়ানরা। প্রতিবেশী পাঞ্জাবের কালো মেঘ শুভ্র হিমালয়ের পাশে ছায়া ফেলতে পারে। কাশ্মীর তো ঘরপোড়া গরু।