সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্র অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। দক্ষিণে সুন্দরবনের জঙ্গল আর উত্তরে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা—সব মিলিয়ে এই রাজ্য পর্যটকদের স্বর্গ। এই মানচিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হল ডুয়ার্স। আর ডুয়ার্স ভ্রমণের আদর্শ কেন্দ্রবিন্দু বা জংশন হল চালসা। অধিকাংশ পর্যটক চালসাকে কেবল একটি পথচলতি ‘চৌমাথা’ হিসেবে চিনলেও, এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
চালসা একটি ছোট্ট জনপদ হলেও যাতায়াতের জন্য এটি অত্যন্ত সুবিধাজনক। এখানকার রেলস্টেশনটি অপূর্ব সুন্দর। ভিস্তা ডোম ট্যুরিস্ট ট্রেন এখানে থামে। স্টেশনের শান্ত পরিবেশ আর ভোরের নির্জনতা যে কোনও ভ্রমণপিপাসুর মন ভালো করে দেবে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী কুর্তি। মূর্তি নদীর মতো পরিচিতি না থাকলেও কুর্তির সৌন্দর্য কোনও অংশে কম নয়। প্রতি মঙ্গলবার মঙ্গলাবাড়িতে বসে ডুয়ার্সের ঐতিহ্যবাহী হাট, যা স্থানীয় জনজীবনের স্পন্দন।
চালসার অন্যতম আকর্ষণ হল ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ‘শালবনী ক্লাব’। ১৯৪৮ সালে এখানে নির্মিত হয়েছিল একটি ‘ঘূর্ণায়মান মঞ্চ’। সেই সময় কলকাতা ছাড়া রাজ্যের আর কোথাও এমন উন্নত নাট্যমঞ্চের কথা জানা যায় না। যদিও আজ সেই যন্ত্র অকেজো। কিন্তু মঞ্চটি আজও ইতিহাসের সাক্ষী দিচ্ছে। ক্লাবের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন গ্রন্থাগার। সরকারি উদ্যোগে এই মঞ্চ ও গ্রন্থাগার সংস্কার করা হলে চালসা উত্তরবঙ্গের একটি প্রধান নাট্য ও গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
চালসাকে কেবল হাইওয়ের মোড় হিসেবে না দেখে ‘সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। শালবনী ক্লাবের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারলে এবং এখানকার সুন্দর বাংলোগুলোকে কাজে লাগালে, চালসা হয়ে উঠবে ডুয়ার্সের প্রাণকেন্দ্র। আপনি কি প্রকৃতি আর সংস্কৃতির মিশেল খুঁজছেন? তাহলে আপনার গন্তব্য হয়ে উঠুক চালসা।
