শুভঙ্কর বসু: ক্রমশ বাড়তে থাকা কোভিড আতঙ্কের মধ্যে ভোটে কোন বড়সড় ঝামেলা হলে তা হবে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত। সে কথা মাথায় রেখেই রাজ্যের সপ্তম দফা নির্বাচনে (Assembly Polls 2021) নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের অতি সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। ষষ্ঠ দফার মতই এবারও বাহিনী মোতায়েনে কোন ফাঁক রাখা হচ্ছে না। এই দফায় দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান এবং দক্ষিণ কলকাতার মোট ৩৪ টি কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকছে মোট ৭৯৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। যার মধ্যে শুধু বুথের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকবে ৬৫৩ কোম্পানি আধাসেনা।
কমিশন সূত্রে খবর, এই দফায় আসানসোল-দুর্গাপুরে মোতায়েন রাখা হবে ১৫৪ কোম্পানি, দক্ষিণ দিনাজপুরে থাকছে ১০৮ কোম্পানি, জঙ্গিপুরে ১০২ কোম্পানি, কলকাতা দক্ষিণের ৪টি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবে ৬৩ কোম্পানি, মালদায় মোতায়েন রাখা হচ্ছে ১২২ কোম্পানি, মুর্শিদাবাদে থাকছে ১০২ কোম্পানি, এবং রায়গঞ্জে ২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। কমিশন সূত্রে আরও খবর, ষষ্ঠ দফার মত এই দফাতেও সাড়ে ছ’শোর বেশি সেক্টর অফিস থাকছে। প্রতিটি সেক্টরে অফিসে একজন এসআই বা কিংবা এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক দায়িত্বে থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন চারজন কনস্টেবল। গত দফার সাফল্য ধরে রাখতে এই দফাতেই জওয়ানদের সতর্ক ও ধৈর্য ধরে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এবার ভোটার সংখ্যা ৮১ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৪২। প্রার্থী রয়েছেন মোট ২৬৮ জন। ১১ হাজার ৩৭৬টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে।
[আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষ ও মিঠুনের সভায় পাঁচশোর বেশি জমায়েত, বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সরব তৃণমূল]
কলকাতা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কয়েকটি আসন বাদ দিলে এই দফাতে বাকি তিন জেলার যেসব আসনে ভোট হওয়ার কথা তার সবকটি স্পর্শকাতর ধরে এগোচ্ছে কমিশন। মালদহ মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম বর্ধমানের এই আসনগুলিতে অতীতের ভোটে হিংসার নজির রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে জেলাগুলিকে যাবতীয় ব্যবস্থা সেরে ফেলতে বলা হয়েছে। চিহ্নিত অপরাধীদের জেলে ভরতে বলার পাশাপাশি হোটেল আবাসস্থলগুলিতে নিয়মিত তল্লাশি অভিযান জারি রাখতে বলা হয়েছে।
এই দফায় মালদহের হাবিবপুর, গাজল, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর, রতুয়া, মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা, সামশেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘী, লালগোলা, ভগবানগোলা, রানীনগর, মুর্শিদাবাদ, নবগ্রাম, পশ্চিম বর্ধমানের দূর্গাপুর পুর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, রানীগঞ্জ, জামুরিয়া, আসানসোল দক্ষিণ, আসানসোল উত্তর, কুলটি, বরাবনি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ, তপনের মতো অতিস্পর্শকাতর কেন্দ্রে ভোট। যেকোনো অবাঞ্ছিত ঘটনা ঠেকাতে সেক্টর অফিস কুইক রেসপন্স টিম, হেভি রেডিও ফ্লাইং ভেহিকেল টিমকে বিশেষ ভাবে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। এই দফাতেও ভোটের দিন ১৪৪ ধারা কার্যকর করতে রাজ্য পুলিশকে বিশেষ ভূমিকা নিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। জেলা গুলিকে স্পষ্ট নির্দেশ, ১৪৪ ধারা না মানলে বিধি অনুযায়ী ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা ও ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় সংশ্লিষ্ট আইনভঙ্গকারীকে জেলে পুরতে হবে।
[আরও পড়ুন: নিরপেক্ষ ভোটের আবেদন, নির্বাচন শেষে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন মমতা]
এদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়ে শুক্রবারই তৎপরতা শুরু হয়েছিল। শনিবার ভোট প্রচারে কোভিড বিধি অমান্যের অভিযোগে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল জেলাগুলিকে। বিধিভঙ্গের অভিযোগে এদিন ৩৯ জন প্রার্থীর ও নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল। পাশাপাশি একই কারণে মোট ৮৯ প্রার্থী, নেতা এবং প্রচারককে শোকজ করা হয়েছে।