সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতীয় পণ্য বয়কটের নামে বিএনপি দেশের বাজারব্যবস্থা অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। এই অভিযোগ তুলে বিএনপির নেতাদের কড়া ভাষায় তোপ দাগলেন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক তথা সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামি লিগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের এক সাংবাদিক সম্মেলন খালেদা জিয়ার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দেশের জাতীয় সাধারণ নির্বাচন। যা বয়কট করেছিল প্রধান বিরোধী দল বিএনপি (BNP)। খালেদা জিয়ার দলের অভিযোগ ছিল, ভারতের সমর্থন ও অঙ্গুলিহেলনেই ভোট করাচ্ছে হাসিনা সরকার। এইবারের নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তিনদফায় ক্ষমতায় ফিরেছে হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। ভোটপ্রক্রিয়ার পর কেটে গিয়েছে ৩ মাস। কিন্তু স্বভাবতই ভারতের বিরোধিতা করে চলেছে খালেদা জিয়ার দল। এবার মে মাসে উপজেলা (বাংলাদেশে তৎকালীন মহকুমা) নির্বাচন সামনে রেখে দেশজুড়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে আন্দোলনের পথে হাঁটছেন দলের নেতা-কর্মীরা। যা নিয়ে বিএনপির কড়া সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কতটা দেউলিয়া, উগ্র মানসিকতা সম্পন্ন, কতটা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে বয়কটের কথা বলতে পারে একটা দল। বয়কটের নামে তারা (বিএনপি) আমাদের বাজারব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে।”
[আরও পড়ুন: দিল্লির মদতে মসনদে হাসিনা! অভিযোগে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক বিএনপির]
আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ক্ষোভ উগরে আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একুশ বছর ভারতের সঙ্গে শত্রুতা করে আমাদের ক্ষতি করেছে বেশি। সম্পর্ক ভালো থাকলে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিস্তা, ফেনী নদী-সহ যেগুলো এখনও সমাধান হয়নি ঠিকই কিন্তু সম্পর্ক ভালো থাকায় এগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভির দিকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, “একজন নেতা নিজের চাদর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বয়কটের নিদর্শন তুলে ধরেছেন। এটা কতটা অবাস্তব? এটা কী করে সম্ভব? আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের একটা বড় অংশ ভারত থেকে আসে। এর সুবিধাও আছে। এতে পরিবহণ খরচ অনেক কম হয়।” ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে আওয়ামি লিগের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, “ঢাকায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করব। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণেও সভার আয়োজন করা হবে। আমাদের একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য দাবি আরও জোরদার করব।”
বলে রাখা ভালো, গত বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভি ভারতীয় পণ্য বর্জনের সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “আওয়ামি লিগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে। এটা বুঝতে পেরে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। দেশের জনগণের নয়, ভারতের সমর্থনে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় টিকে আছে। তাদের ক্ষমতায় থাকতে তলেতলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়, আওয়ামি লিগের পক্ষে। ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা, গুম খুন ও অবিচারের জন্য ভারত দায়ী বলে জনগণ মনে করে। জনগণ তাঁদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে।” দেশজুড়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে বিএনপিকে সমর্থন জানিয়েছে আরও প্রায় ৬২টি দল।