shono
Advertisement
Ayurved

গঙ্গাধর ঘরানার আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নতুন করে চর্চায়, দেশের বাইরেও হচ্ছে গবেষণা

অগ্নিযুগের এই সাধক-বিপ্লবী আয়র্বেদ চিকিৎসক নতুন করে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
Posted: 01:54 PM Apr 08, 2024Updated: 01:54 PM Apr 08, 2024

গৌতম ব্রহ্ম: নাড়ি টিপে যদি কেউ নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ বলে দেন? হাতের নাগালে থাকা সামান‌্য ভেষজ দিয়ে কেউ যদি রাজা-বাদশার দুরারোগ্য হয়ে ওঠা ব‌্যাধি নিরাময় করেন? সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ না পড়ানোর ফতোয়া জারি হওয়ায় কেউ যদি আস্ত একটা স্কুল খুলে ৫০০ ছাত্রকে ডাক্তারি পড়ানোর ব‌্যবস্থা করেন? কী বলা যাবে তাঁকে? সাধক না বিপ্লবী? নাকি দু’টোই?

Advertisement

অগ্নিযুগের এই সাধক-বিপ্লবী আয়র্বেদ চিকিৎসক নতুন করে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ,তাঁকে নিয়ে দু’টি বিশ্ববিদ‌্যালয় গবেষণা শুরু করেছে। ২০১৮ সালে রাজস্থানের জয়পুরের ন‌্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ (এনআইএ)। আর সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ‌্যালয়। কবিরাজ গঙ্গাধর রায়। ব্রিটিশ ভারতের এই চিকিৎসকের পরতে পরতে রহস্য। চরক সংহিতাকে গুলে খেয়ে তিনি নিজস্ব এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন। সেই গঙ্গাধর ঘরানাই এখন গুজরাত থেকে অসম সর্বত্র প্রচলিত। গঙ্গাধরের চিকিৎসা পদ্ধতি, দর্শন, শাস্ত্রজ্ঞান সবই ছিল সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে। দক্ষিণ ভারতে এখনও তাঁর দর্শন পড়ানো হয়।

কয়েক হাজার বছরের চরক সংহিতার দুর্বোধ্য হয়ে থাকা অংশগুলিকে এই বাঙালি চিকিৎসকই সহজ সরল করে উপস্থাপিত করেছেন, তাঁর টিকা জল্পকল্পতরুর মাধ্যমে। এই গ্রন্থ আয়ুর্বেদের আকর গ্রন্থের থেকেও বেশি। আসলে, শুধু আয়ুর্বেদ নয়, ব‌্যকরণ, দর্শন, সংস্কৃত শাস্ত্র সবেতেই তিনি ছিলেন পণ্ডিত। সতেরো বছর বয়স থেকে বই লেখা শুরু। সারা জীবনে শতাধিক বই লিখেছেন। যার অনেকগুলিরই এখন আর সন্ধান মেলে না। সেই সব হারিয়ে যাওয়া মনিমুক্তোর খোঁজেই শুরু হয়েছে গবেষণা। ভরকেন্দ্রে এক বাঙালি আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা. অসিত পাঁজা। গঙ্গাধরের দর্শন, জীবনী নতুন করে লিখছেন এনআইএ-র এই অধ‌্যাপক! বংশলতিকা ধরে কথা বলেছেন পরিবারের উত্তরসূরিদের সঙ্গে। 

[আরও পড়ুন: অতিরিক্ত সুগন্ধী ব্যবহার করছেন? ডেঙ্গুর মশাকে ডেকে আনছেন না তো?]

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সৈদাবাদে একটি প্রতিনিধিদল গঙ্গাধরের বাড়ি যায়। ডা. বিশ্বজিৎ ঘোষ ও সুদীপ্ত মুন্সি। সুদীপ্ত অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে গবেষণা করেন। বিশ্বজিৎ এই বাংলারই আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। এই দু’জনেই গঙ্গাধরের প্রতিবেশী ও উত্তরসূরিদের সঙ্গে কথা বলে অনেক অজানা তথ্য সামনে এনেছেন। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে ছাত্রজীবন শেষ করে কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটে প্র‌্যাকটিস শুরু করেন গঙ্গাধর। কিন্তু শহুরে আবহাওয়া সহ্য হয়নি তাঁর। শরীর ভাঙতে শুরু করে। বাবার পরামর্শে এরপর মুর্শিদাবাদে চলে যান গঙ্গাধর। ইংরেজ ডাক্তারের সঙ্গে বাজি ধরে মুর্শিদাবাদের নবাবকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। সুস্থ করেছিলেন দুরোরোগ্য ব‌্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া রানীমা স্বর্ণময়ী দেবীকে। গঙ্গাধরের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল সুলভ। তিনি হাতের নাগালে থাকা কাষ্ঠষৌধি দিয়েই কঠিন ব‌্যামো সারিয়ে দিতেন। গোমূত্রের সঙ্গে হরেক ওষুধ মিশিয়ে তাঁর দেওয়া কয়েকটি থেরাপি ইতিহাস হয়ে গিয়েছে।

বাড়িতে গরু পুষতেন গঙ্গাধর। কয়েকশো ছাত্র তাঁর টোলে থেকে পডাশোনা করতেন। নাড়িবিজ্ঞান থেকে ওষুধ তৈরি, সবই হাতে ধরে শেখাতেন। শিক্ষান্তে ছাত্রদের পরীক্ষায় বসতে হত। কৃতকার্য হলে গুরুর নির্দেশে নিজের নিজের এলাকায় শুরু করতেন প্র‌্যাকটিস। গুজরাত, রাজস্থান, বেনারস, উত্তর-পূর্ব ভারত, কলকাতা-সর্বত্র গঙ্গাধরের ঘরানাই এখন বহমান। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কলকাতার দ্বারকানাথ সেন, রাজশাহীর হারানচন্দ্র চক্রবর্তী, বীরভূমের গয়ানাথ সেন, পাবনার যদুনাথ দাস, মুর্শিদাবাদের শ্রীচরণ সেন, বেনারসের পরেশনাথ সেন প্রমুখ।

[আরও পড়ুন: তীব্র গরমে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, অ্যাডিনো, বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে ভরসা মাস্ক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কবিরাজ গঙ্গাধর রায়। ব্রিটিশ ভারতের এই চিকিৎসকের পরতে পরতে রহস্য।
  • চরক সংহিতাকে গুলে খেয়ে তিনি নিজস্ব এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন।
  • তাঁকে নিয়ে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু করেছে।
Advertisement