সুকুমার সরকার, ঢাকা: আর পাঁচটা তরুণীর মতো চাকরি বা ঘরকন্না করার কথা ভাবত না সে। জঙ্গিদের জালে পা দিয়ে ফিদায়েঁ জঙ্গি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখত সে। আর সেই রক্তাক্ত পথে পা দিয়ে বাংলাদেশে (Bangladesh) আল কায়দার শাখা সংগঠন আনসার আল ইসলামে যোগ দেয় জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা। কীভাবে জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য হয়ে উঠল সে, এবার তদন্তকারীদের সেই কথাই শোনাল নাবিলা।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে বাংলাদেশে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার]
সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সদ্য গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা আদালতে ১৬৪ ধারায় ভয়ংকর জঙ্গি হওয়ার জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার মহানগর হাকিম শাহিনুর ইসলাম তার খাস কামরায় নাবিলার জবানবন্দি নেন বলে পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মহম্মদ জাফর হোসেন জানিয়েছেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার জঙ্গি সদস্যের নাম জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা। বয়স মাত্র ১৯ বছর। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সে জড়িয়ে পড়েছিল। আনসার আল ইসলামে সেই প্রথম নারী সদস্য। র্যাডিকালাইজেশনের শেষ ধাপে ছিলেন নাবিলা। সন্ত্রাস দমন শাখার প্রধান বলেন, “এই জঙ্গি সংগঠনটিতে এর আগে কোনও মহিলা সদস্য ছিল বলে জানা যায়নি। এই প্রথম এই সংগঠনের কোনও নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
কীভাবে ওই তরুণী জঙ্গি হয়ে উঠল, সেই বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের আরও নারী সদস্য গ্রেপ্তার হলেও তারা নাবিলার মতো প্রশিক্ষিত ছিল না। আনসার আল ইসলামের হয়ে মিডিয়া শাখা অর্থাৎ জঙ্গিবাদের প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব পালন করত নাবিলা। সামরিক শাখার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সে দেশ ও দেশের বাইরে যে কোনও সময় ‘জিহাদ’ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে নাম-পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়ায়’ যুক্ত হয়। তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নাবিলা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও ‘Chirpwire’ নামের অনলাইন প্লাটফর্মে ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট খোলে।
মামলার নথিপত্রে বলা হয়েছে, নাবিলা নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিশিয়াল ও আন-অফিশিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিল। সেই চ্যানেলে আইডি ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলায় কৌশলগত বিষয়ে ভিডিও এবং ফাইল শেয়ার করত সে। এমনকী সাম্প্রতিক সময়ে তার বিয়ের কথাবার্তা চললে সে ছেলে পক্ষকে জানায়, জিহাদের ময়দানে ডাক এলে সে সামনের সারিতে থাকবে। এমনকি শহীদি মৃত্যু এলেও পিছু হটবে না এবং ছেলে (পাত্র) এরূপ মতাদর্শের না হলে সে বিয়ে করবে না। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গির কীভাবে যুবপ্রজন্মের মগজধোলাই করছে তারই প্রমাণ নাবিলা।