সুকুমার সরকার, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। হালে বাংলাদেশে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও অবাধ-সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়ার দাবিতেও সরব হয়েছে ইইউ। ফলে ঢাকা-ব্রাসেলস সম্পর্ক আপাতত শৈত্যপ্রবাহের কবলে। তাই ইইউ-তে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি কতদিন বজায় থাকবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার। দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত ২৭টি দেশ। বছরে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। তার বিপরীতে ইইউ থেকে আমদানি ৪০০ কোটি ডলারেরও কম। ফলে ইইউর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। ইইউতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৯৩ শতাংশই তৈরি পোশাক। অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপির কল্যাণে গত দুই দশকে এই বাজারে পোশাকশিল্প শক্ত জায়গায় পৌঁছেছে।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল তালিকায় যুক্ত হলেও পরের তিন বছর সুবিধাটি থাকবে। তারপর ইইউতে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস পেতে হবে। যদিও বর্তমান নিয়মনীতিতে তা সম্ভব নয়। এ জন্য ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা চলছে।
[আরও পড়ুন: শীতেও বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ, বড় সংক্রমণের ইঙ্গিত বিশেষজ্ঞদের]
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘অবনতি’তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এই মর্মে গত বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, মানবাধিকার কর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য ইইউর অবাধ বাজার সুবিধা ‘এভরিথিং বাট আর্মসের’ (ইবিএ) পরিসর আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সনদের লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মামলাটি একটি পশ্চাদ্গামী পদক্ষেপ, যা উদ্বেগের। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। ইবিএ কর্মসূচির মাধ্যমে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ইইউ কখনওই ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক ইস্যুকে জড়ায়নি। এবারের বিষয়টি কোন দিকে যাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের প্রত্যাশা, ইইউ রাজনীতির সঙ্গে বাণিজ্যকে জড়াবে না। জিএসপি কর্মসূচির ওপর ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনও এই যুক্তির ভিত মজবুত করছে। গত ২১ নভেম্বর প্রতিবেদটি প্রকাশিত হয়। দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ইইউতে পণ্য রপ্তানিতে সহায়তা করতে জিএসপি হচ্ছে ইইউর প্রধান বাণিজ্য নীতি। সাম্প্রতিক সময়ে জিএসপি সুবিধা পাওয়া তিন দেশ-বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছে ইইউর।