সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কামড়ে জেরবার বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। এর মোকাবিলায় চলছে নিরন্তর লড়াই। COVID-19’এর চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ‘রেমডেসিভির’ (Remdesivir) বেশ কার্যকরী। গবেষণার পর এই তথ্য উঠে আসায় নাম উঠে আসার পরেই এটি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাঁরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাঁদের চিকিৎসায় মূলত এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়। রেমডেসিভিরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। করোনা পরিস্থিতি সামলাতে সেখানকার খ্যাতনামা ছ’টি ওষুধ কোম্পানিকে রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমোদন দিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে দু’শো ছুঁতে চলল। আক্রান্ত ১০ হাজারের বেশি। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়ে রেমডেসিভির উৎপাদনে অনুমতি দিয়েছে হাসিনা প্রশাসন। আর অনুমোদন পেয়েই কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ৬ টি কোম্পানি। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, রবিবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান দেশের বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বেক্সিমকো, বিকন, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস – এই সংস্থাগুলি তৈরি করবে ওষুধটি।
[আরও পড়ুন: ১৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হল সাধারণ ছুটির মেয়াদ, জমায়েত না করার নির্দেশ হাসিনার]
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং যাঁদের মধ্যে উপসর্গ রয়েছে, তেমন ৫৩ জন রোগীর ক্ষেত্রে রেমডেসিভির শতকরা ৭০ ভাগ কার্যকর। কিন্তু এক-চতুর্থাংশের ক্ষেত্রে কিডনি ও লিভারের জটিলতা-সহ নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মার্কিন কোম্পানির ওষুধ রেমডেসিভির মূলত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধী। এটি ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। রেমডেসিভির একটি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি (Replication) কমায় এই ওষুধ। রেমডেসিভিরের প্রধান কাজ হল, মানব কোষে ঢোকার পর ভাইরাস যে বংশবৃদ্ধি করে, তা বন্ধ করে দেওয়া। এটি একমাত্র আমেরিকার জিলিয়াড বায়োটেকনোলজি কোম্পানি তৈরি করে।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে করোনার বলি আরও এক পুলিশকর্মী, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৭]
করোনা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে ভাইরাল RNA ডিপেনডেন্ট RNA পলিমারেজ এনজাইম প্রয়োজন। রেমডেসিভির এই এনজাইমকে ব্লক করে। ফলে ভাইরাসের বিস্তার কম হয়। বংশবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় আক্রান্ত রোগীর দেহে ভাইরাস লোড অনেক কমে যায়। এতে তাঁদের হাসপাতালে অপেক্ষাকৃত কম দিন থাকতে হয়। মৃত্যুর হার ১১ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসে। চিকিৎসকরা জানান, করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসের কোষে ঢোকার পর কোষের বংশবৃদ্ধির উপাদানগুলো অকার্যকর করে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। একটা ভাইরাস মুহূর্তেই লাখো ভাইরাসের জন্ম দেয়। এক সময় এই ছোট ছোট ভাইরাস কোষকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে বের হয় এবং পাশের নতুন একটি কোষকে আক্রমণ করে, তারপর আবার বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। আর এভাবেই করোনা ভাইরাস ফুসফুসকে ধ্বংস করে মাত্র কয়েকদিনে। রেমডিসিভির তা প্রতিরোধের কাজ করে।
The post করোনা যুদ্ধের অস্ত্র ‘রেমডেসিভির’, ৬ টি দেশীয় সংস্থাকে তৈরির অনুমতি দিল বাংলাদেশ appeared first on Sangbad Pratidin.