সুকুমার সরকার, ঢাকা: আশঙ্কা সত্যি করে বাংলাদেশের (Bangladesh) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী, আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত লঘুচাপটি নিম্নচাপে (Depression)) পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। তাই বাংলাদেশের সবক’টি সমুদ্রবন্দরে দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। শনিবার ঢাকায় (Dhaka) আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিমি দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪০ কিমি দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সমুদ্র উত্তাল। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থিত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলিকে উপকূলের কাছাকাছি অতি সাবধানে চলাচল করার নির্দেশ জারি হয়েছে। একইসঙ্গে নৌকা ও ট্রলারগুলিকে গভীর সমুদ্রে বিচরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
[আরও পড়ুন: আগামী বছরের ছুটির তালিকা ঘোষণা নবান্নর, আরও আনন্দ পুজো ও ভাইফোঁটায়]
সিত্রাং (Sitrang) থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম। এই নামের অর্থ পাতা। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎ সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় (অক্ষাংশ: ১৩° উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৯১.৫° পূর্ব) নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামী তিনদিন উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আবহাওয়ার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এছাড়া দেশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের নানা জায়গায় কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চলতি মাসের পুরো সময়ই আবহাওয়া এমনই থাকার সম্ভাবনা।
[আরও পড়ুন: সম্প্রীতির কালীপুজো নানুরে, হিন্দু যুবকদের সঙ্গে হাতে হাত মেলান মৌলবীরাও]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) নৌবাহিনী পরিচালিত ‘জয়েন টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারে’র তথ্য বলছে, আন্দামান ও নিকোবর সমুদ্র এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটির ‘ইনভেস্ট ৯২বি’ নামকরণ করা হয়েছে, যেটি এক দিনের ব্যবধানে আরও শক্তিশালী হয়েছে। ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জনের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। খুলনা বিভাগে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি যদি কিছুটা পূর্বদিকে সরে গিয়ে পুরোপুরি খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে ঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে ২৪ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা।