সুকুমার সরকার, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হামলার শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। তাঁদের বাড়ি-ঘর, সম্পত্তি সব কিছুতে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। বাদ যাচ্ছে না হিন্দু মন্দিরও। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও অশান্তি থামেনি। এবার এইসব অত্যাচারের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন হাজার হাজার হিন্দু। উদ্বেগ প্রকাশ করে হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত কমিটি গড়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোয় তিন দিনের ছুটির সুপারিশ করা হবে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এখনও সেদেশে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা থামেনি। প্রাণ সংশয়ের আতঙ্ক তাড়া করে বেরাচ্ছে হিন্দুদের। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘও। অন্যান্য সংখ্যালঘু ও হিন্দুদের উপর হামলার কড়া নিন্দা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনুস। এর মাঝেই দুর্গাপুজো নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। আজ, সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, "দুর্গাপুজোয় দুই-তিন দিন ছুটি দিলে অসুবিধা কি? ছুটি আমরাও উপভোগ করব, সমস্যা তো নেই। এই বিষয়ে সচিবকে বলেছি। ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে কেবিনেটে আলোচনা হবে।"
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে দুর্গাপুজোয় এক দিনের ছুটি থাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরও হিংসার শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। মন্দির ধ্বংস করা হচ্ছে। যা নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো নানা জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে। পথে নেমেছে হিন্দু সম্প্রদায়। হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন পড়ুয়ারাও। এই আহবে দুর্গাপুজোকে ঘিরে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্প্রীতির বার্তাই দিতে চাইল এই নয়া সরকার।
এদিকে, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, "সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে যারা হামলা করেছে, তারা মূলত দুর্বৃত্ত। এসব দুর্বৃত্তকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের সবরকম চেষ্টা করা হবে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা থাকলেও এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্ম মন্ত্রণালয় আগেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশে ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সংখ্যালঘুদের রক্ষায় একটি হট লাইন নম্বর খোলা হবে। যদি কোথাও কোনও হামলা হয় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে উপাসনালয় ও অন্যান্য ক্ষতির তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের কী পরিমাণ সাহায্য করা যায়, সেটা আগামীকাল মঙ্গলবার ঠিক করা হবে।" হিন্দুদের উপর হামলা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছে রাষ্ট্রসংঘও। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত, আমেরিকা, কানাডার মতো দেশ।