সুকুমার সরকার, ঢাকা: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সংস্কারে পরিবর্তন এসেছে। কিছু সংস্কার ছেঁটে ফেলে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে বয়স নির্বিশেষে নানা প্রজন্ম। মন থেকে কতটা আধুনিক হলে তবে নিজের জীবনকে আমূল বদলে ফেলা যায়, তা বোঝালেন ঢাকার (Dhaka) মিরপুরের ৫৩ বছরের নাদিরা বেগম। মেয়েদের ঠিক করা পাত্রকে বিয়ে (Marriage) করলেন তিনি। সুখেশান্তিতে সংসারও শুরু করে দিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগেই স্বামীকে হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ (Bangladesh)। এরপর থেকে দুই মেয়ে জান্নাতুল ফিরদৌস ও মারিয়াম জ্বিমকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফিরদৌসের বিয়ে দেন তিনি। বড় মেয়ে জান্নাতুল এরপর ছোট বোন মারিয়মকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এতে একা হয়ে পড়েন মা নাদিরা। দুই মেয়ে মাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। অনেক ভেবেচিন্তে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, মাকে বিয়ে দেবেন। এতে মা একজন সঙ্গী পাবেন এবং নতুন সংসারে বাকি জীবনটা ব্যস্ততায় কাটাতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: হরিদেবপুর খুন: ‘দু’মাসের অন্ত্বঃসত্তা’, একাদশীর দিন অয়নের মায়ের হাত ধরে জানিয়েছিল প্রেমিকা]
ব্যস, যেই না ভাবনা, ওমনি কাজ। মাত্র দু’মাসের চেষ্টায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সী মহম্মদ হান্নান খানের সঙ্গে নাদিরা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন মেয়েরা। এই বিয়েতে সবরকমভাবে সহযোগিতা করেছেন ফিরদৌসের স্বামী মাহমুদুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, তিনি শাশুড়ির বিয়েতে উকিলের ভূমিকায় ছিলেন। বিয়ের পর ঢাকার মিরপুরে স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার পেতেছেন নাদিরা বেগম। নতুন বর মহম্মদ হান্নান খান মাহমুদুল ইসলাম ও জান্নাতুল ফিরদৌসকে ‘আব্বা’ ও ‘আম্মা’ বলেই সম্বোধন করছেন।
এর আগে নাদিরা বেগম ২৮ বছর সংসার করেছেন। আর নতুন বিয়ের পর মাত্র সাতদিন পেরিয়েছে। নাদিরা বেগম ও হান্নান খান নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই ফাঁকে দুজন দুজনকে চিনতে, বুঝতে সময় নিচ্ছেন। তবে দু’জনই হাসিমুখে বললেন, তাঁরা সঙ্গী নির্বাচনে ভুল করেননি। এই বয়সে এসে তাঁরা চেয়েছিলেন, জীবনসঙ্গী যেন ভাল মানুষ হন, সে বিষয়ে তাঁদের মধ্যে এখন আর কোনও দ্বিধা নেই। নাদিরা বেগম অকপটেই জানালেন, স্বামী হান্নান খান সহজে রেগে যান না, পান-সিগারেটের নেশা নেই। তাঁর মুচকি হাসি খুব ভাল লেগেছে। আর পাশ থেকে হান্নান খান মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, নাদিরা বেগমের অকপটে কথা বলাটাই তাঁর বেশি পছন্দ।
[আরও পড়ুন: অতি ভক্তি! প্রবীণ বিজেপি নেতার পা ধুইয়ে দিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ভাইরাল ভিডিও]
সামাজিক, পারিবারিক বাস্তবতায় মায়ের নতুন করে বিয়ে দেওয়া বা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল না। জান্নাতুল ফিরদৌস ও স্বামী মাহমুদুলকে তাই বিস্তর ভাবতে হয়েছে। অবশেষে দু’জন নিঃসঙ্গ মানুষকে এক করতে পেরে তাঁরা আনন্দিত। মায়ের বিয়ের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে (Facebook) পোস্ট দিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে এত বেশি ইতিবাচক প্রচার দেখে নিজেরাই অবাক হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি মানুষ নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এক হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। জান্নাতুল বললেন, মায়ের বিয়ের পোস্টটি দেওয়ার পর থেকেই তা শেয়ার হতে থাকে। প্রায় সবই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। যাঁরা নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, তাঁকে কিছু বলতে হচ্ছে না, অন্য মন্তব্যকারীরাই প্রতিবাদ করছেন। হান্নান খানের স্ত্রী সাত বছর আগে মারা গিয়েছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে বিয়ে করে নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।