শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী, ঢাকা: মেয়েটার জন্য কলঙ্কিত হলেন বাবা...কথাটা বলার সময় চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠল গাজি সাহেবের। এককালে আওয়ামি লিগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এখন সেভাবে আর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তাই তো বললেন,"বাসা থেকে আর তেমন বের হই না।" গত প্রায় এক বছর ধরে চলা অচলাবস্থার জন্য বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ কাঠগড়ায় তুলছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই। তাঁর শাসনকালের দুর্নীতি-অচলাবস্থাকেই। আজ যেভাবে গোটা দেশে মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে, তার পিছনে রয়েছে হাসিনার অপদার্থতা! বলছেন আওয়ামি লিগের সমর্থকরাই।

ঢাকা পুলিশের কমিশনার পদে কর্মরত শুভ্র মিনাজ। বৈশাখি শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কথায় কথায় আলাপ হল। কলকাতা থেকে খবর এসেছি শুনে যেন মনের দরজা খুলে দিলেন। বছর পাঁচেক আগে শেষবার কলকাতায় গিয়েছিলেন। তখনই সে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিজের চোখে দেখা। যার কণাভাগটাও ঢাকায় আজ অবধি সম্ভব হয়নি। আক্ষেপ শুভ্রের। মধ্য চল্লিশের ওই পুলিশকর্তার কথায়, এখানকার মানুষের মধ্যে আজও বঙ্গবন্ধুর প্রতি একটা আবেগ আছে। কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ ছাড়া সকলেই মুজিবকে শ্রদ্ধা করেন।
তাহলে এই যে মুজিবের বাড়ি ভাঙচুর, মুর্তির উপর প্রস্রাব করার ঘটনা...প্রশ্নটা শুনেই খানিক থমকালেন। স্বীকার করলেন যা ঘটেছে অন্যায় হয়েছে। আসলে এ সবই মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের একটা শ্রেণির মানুষ আজও শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার বোন রেহনার জন্য সব কিছু আজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাবাকে সামনে রেখে দেশ লুঠের কাজ শুরু করেছিলেন দুই বোন। এসব তারই ফল। আর হল ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের স্পষ্ট অভিমত, "দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে আমরা সব সময় সচেষ্ট। কিন্তু ওদেশের বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে ভূমিকা নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট। অন্যায় যে কিছুই হচ্ছে না, এ কথা বলব না। অবশ্যই কিছু ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই সংবাদমাধ্যম ফুলিয়ে ফেঁপিয়ে অনেক ঘটনা দেখাচ্ছে। এটা ঠিক নয়।" পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও শফিকুলের দাবি, "অকারণে কেন বিরোধিতার পথে যাব আমরা। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই আমাদের প্রতিবেশি। অন্তর্বর্তী সরকার কখনই কোনও বিরোধের নীতি অনুসরণ করবে না। একটা সুষ্ঠু সমাজ তৈরির চেষ্টা করতে তো কোনও সমস্যা নেই।"
বাংলাদেশের হিন্দুরা কতটা নিরাপদ? প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিক বলছেন, দেশে সংখ্যালঘু সমস্যা মূলত রাজনৈতিক। তাই সমাধানও হতে হবে রাজনৈতিকভাবেই। আওয়ামি লিগ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল এতদিন। অনেকক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, হিন্দু মন্দির ধ্বংসের পিছনে ছিল আওয়ামি লিগের হাত। আশার কথা, এখন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর কঠোরতায় পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো। তবে, তাঁর আশঙ্কা, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ বিন্দুমাত্র আলগা হলেই পরিস্থিতি ফের খারাপ হবে। কারণ সেই একটাই। ধর্মীর মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত। আর এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনাই।