সুকুমার সরকার, ঢাকা: দিন চারেক আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘন করে ইলিশ শিকারের অভিযোগে ভারতের ৩১ মৎস্যজীবীকে আটক করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এবার ফের ৪৮ ভারতীয় মৎস্যজীবীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, খুলনার মোংলা বন্দরের অদূরে ফেয়ারওয়ে সংলগ্ন গভীর সাগর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ৩টি ফিশিং ট্রলার আটক করে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। ট্রলারগুলোয় মোট ৪৮ জন মৎস্যজীবী ছিলেন। এনিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের নিয়মিত প্যাট্রোলিং সময়ে জাহাজের রাডারে সন্দেহজনক ফিশিং ট্রলারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সমস্ত দিক খতিয়ে ভারতের পতাকাবাহী ট্রলার হিসেবে সেগুলোকে শনাক্ত করা হয়। সেসময় ট্রলারগুলো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ধাওয়া করে তাদের বাংলাদেশের জলসীমাতেই আটক করে। মোংলা থানার ওসি মহম্মদ আনিসুর রহমান জানান, এঘটনায় থানায় কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। আটক মৎস্যজীবীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই মৎস্যজীবীরা কোথাকার বাসিন্দা বা পরিচয় কিছুই এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার মরশুমে বঙ্গোপসাগরে টহল চলছিল বাংলাদেশের নৌবাহিনীর। বিএনএস শহিদ আখতার উদ্দিন নামে একটি জাহাজ নিযুক্ত ছিল এই কাজে। গত ১৪ অক্টোবর তার রাডারে ধরা পড়ে সন্দেহজনক দুটি মাছ ধরার ট্রলার। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের পর নৌবাহিনী দাবি করে, ট্রলার দুটিতে ভারতীয় পতাকা ছিল। জানা যায়, সেগুলো পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের। এর পর ওই জলসীমাতেই ট্রলার দুটিকে আটক করা হয়। পটুয়াখালি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় দুই ট্রলারের ৩১ জন মৎস্যজীবীকে। মৎস্যজীবীদের স্থানান্তরিত করা হয় কলাপাড়া থানায়। সেখানেই তাঁদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশের নৌসেনা।
বলে রাখা ভালো, মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সাগর ও নদীতে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এই বিধিনিষেধ প্রতিবছর আরোপ করা হয়। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার এই জলসীমা নিয়ে বরাবরই জটিলতা রয়েছে দুদেশের মধ্যে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে যাওয়া মৎস্যজীবীদের দাবি, তাঁরা নিজেদের জলসীমায় মাছ ধরছিলেন। আর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দাবি, এই নিষেধাজ্ঞার মাঝেও মৎস্যজীবীরা তাঁদের জলসীমায় ঢুকেছিলেন ইলিশ ধরতে, যা বেআইনি কাজ। সেই কারণে মৎস্যজীবী-সহ ট্রলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের চিন্তায় উদ্বিগ্ন পরিবার। এর মাঝেই ফের ৪৮ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে আটক করল বাংলাদেশ