সুকুমার সরকার, ঢাকা: পূর্বাভাস মতোই ওড়িশার ধামড়া এবং ভিতরকণিকার মাঝামাঝি এলাকায় আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'। বৃহস্পতিবার রাতেই ল্যান্ডফল হয় সাইক্লোনটির। বাংলাদেশের উপকূলে কতটা আঘাত হানবে 'ডানা' তা নিয়ে নানা আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছেন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আজ শুক্রবার সকালেই দেখা মেলে রোদ ঝলমলে আকাশের।
চলতি বছরের মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল বাংলাদেশ। ঘটে প্রাণহানিও। এবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ‘ডানা’র ঝাপটার। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বুধবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করে। উপকূলবর্তী এলাকায় ঝোরো হাওয়া বইতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তাল হয়ে ওঠে কক্সবাজার উপকূল। স্বাভাবিকের চেয়ে সাত থেকে আট ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূলে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নির্মিত কয়েকশো ফুট লম্বা জেটির মধ্যভাগের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে জেটির অবশিষ্ট অংশেরও ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন খুলনার উপকূলে শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে মেঘ দেখা গেলেও আবহাওয়া স্বাভাবিক। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ডানার প্রভাব কাটলেও খুলনা উপকূলের মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি। দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগমনী সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিশিত কুমার মণ্ডল বলেন, "আয়লা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। এর পর থেকে ঝড়ের কথা শুনলেই আমাদের বুক কাঁপে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুতারখালী নদী। নদীর ভাঙনে গ্রামের তেলিখালী এলাকায় ওয়াপদা রাস্তা প্রায় বিলীন হতে চলেছে। যেকোনও জলোচ্ছ্বাসে একেবারে ভেঙে যাবে এই রাস্তা। তাই ঝড়ের কথা শুনে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ডানার প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি অনেকটা কমে এলেও বৃহস্পতিবার রাতে আবার কয়েক দফায় বৃষ্টি ঝরে। আজ সকাল থেকে রোদ ওঠায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।"
গতকাল জোয়ারের তোড়ে ধসে যাওয়া কয়রার দশালিয়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ জল উন্নয়ন বোর্ড। ডানার প্রভাব কেটে যাওয়ায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। এদিন সকালে কয়রার কপোতাক্ষ নদের পারে বহু মানুষের ভিড় দেখা যায়। জোয়ারে নদের জল কতটুকু বেড়েছিল সেটি দেখতে এসেছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলীর কথায়, "গতকাল সারা রাত একফোঁটাও ঘুম হয়নি। কখন না জানি বাঁধ ভেঙে যায়, এই চিন্তা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে যায়নি। সকালে আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টি নেই, ঝড় নেই। স্বস্তি পাচ্ছি।" কয়রা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত আধিকারিক হাসানুল বান্না জানান, ডানার প্রভাবে দুদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কয়রায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। 'ডানা' আঘাত না হারায় এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।