সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ডেডলাইনের মধ্যে বকেয়ার কিছু অংশ আদানি গ্রুপকে পরিশোধ করল বাংলাদেশ। সূত্রের খবর, ১৭৩ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করেছে ইউনুস সরকার। আদানি গ্রুপ বিদ্যুতের বকেয়া হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। এদিকে দেশের চাহিদা মাথায় রেখে বাংলাদেশ এবার নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর।
বকেয়া ৮৪৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ না করায় চলতি মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল আদানি গ্রুপ। একইসঙ্গে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল আদানির সংস্থা। এই অবস্থায় দেশকে আঁধারে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৭৩ মিলিয়ন ডলারের একটি নতুন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) জারি করেছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে এটি আদানি পাওয়ারের জন্য ইস্যু করা তৃতীয় এলসি। বাংলাদেশের কৃষি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এই এলসি দেওয়া হচ্ছে ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ককে। আগের এলসিগুলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আদানি গোষ্ঠী।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে আদানি পাওয়ারের দুটি ইউনিট রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত মোট ১৬০০ মেগাওয়াটের পুরোটাই বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে। আদানির সংস্থার কাছ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে শেখ হাসিনার সরকার চুক্তিটি করেছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে প্রতি মাসে ৯৫ থেকে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু সেই বকেয়া বেড়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলারে। আর তাতেই আদানিরা বিদ্যুতের জোগান কমিয়ে দিয়েছিল। আঁধারে ডুবতে বসা দেশকে বাঁচাতে বকেয়া পরিশোধ করা ছাড়া উপায় ছিল না ইউনুস সরকারের। ফলে কিছুটা হলেও সেই বকেয়া মেটানো হল, যার পরিমাণ ১৭৩ মিলিয়ন ডলার।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহম্মদ ফাওজুল কবীর খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ''আমরা ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধ করছি এবং কেউ সরবরাহ বন্ধ করলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কোনও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের জিম্মি করতে দেব না।'' বিপিডিবি এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বকেয়া পরিশোধ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর আদানি গোষ্ঠীর বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা তুলে নিলেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমছে।
নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশে।
এদিকে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। তবে এই বিদ্যুৎ আসবে ভারত হয়ে। এ বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই চুক্তির এক মাসের বেশি সময় পর এসে নেপাল জানিয়েছে, ভারত শিগগিরই তাদের ভূখণ্ড হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির অনুমতি দেবে। চলতি মাসের ৩-৬ তারিখ পর্যন্ত ভারত সফর করেন নেপালের জ্বালানি ও জলসম্পদমন্ত্রী দীপক খাড়কা। সফরকালে তিনি ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার ও জলসম্পদমন্ত্রী সি আর পাটিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জ্বালানি, জলসম্পদ এবং সেচ বিষয়ে সহযোগিতার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহ অবকাঠামো ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা হয়। নেপাল বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ভারতের মাধ্যমে ১৫ জুলাই থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে।