সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবন-মৃত্যুর সুতোয় ঝুলছিল প্রাণপাখি। এই লড়াইয়ে অবশেষে হার মানলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার সকালে ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। এদিন তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা।
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিয়েও অনেকদিন ধরে লড়েছেন খালেদা জিয়া। কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস, চোখের সমস্যা শেষ জীবনে তাঁকে জর্জরিত করে ফেলেছিল। লন্ডনে গিয়ে মাস ছয়েক চিকিৎসা করার পরও শরীর তেমন সুস্থ হয়নি। গত ২৩ নভেম্বর ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের দিয়ে তৈরি মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মাঝেমধ্যে চিকিৎসায় সাড়াও দিয়েছেন অশীতিপর নেত্রী। কিন্তু তাঁদের সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সোমবার রাতেও মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন খালেদা-পুত্র তারেক। তার আগে বিএনপি দফতরের সামনে থেকে খালেদার আরোগ্যকামনায় প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার জন্ম। তাঁর আসল নাম ছিল খানুম পুতুল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানকে বিয়ের পর বেগম খালেদা জিয়া হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বা বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর তাঁর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা। মেজর জিয়ার মৃত্যুর পর সক্রিয়ভাবে গণতান্ত্রিক পথে পা বাড়িয়েছেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া ও স্বামী মেজর জিয়াউর রহমান। ফাইল ছবি।
মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ছিলেন জিয়াপত্নী। পরে অবশ্য আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি এবং খালেদা জিয়া নিজেও প্রবল রাজনৈতিক চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ক্রমশ শারীরিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। পরে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপি কিছুটা অক্সিজেন পায়। খালেদার নেতৃত্বে ফের ঘুরে দাঁড়াতে কোমর বাঁধে। কিন্তু অশীতিপর খালেদার পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব ছিল না। ধীরে ধীরে শারীরিক অসুস্থতা তাঁকে একেবারে কাবু করে ফেলে। অবশেষে পদ্মাপাড়ের রাজনীতির আকাশ থেকে খসে পড়ল এক তারা।
